২০০৮-এ প্রকাশিতপ্রথম বই নিয়ে লেখকদের কথা

admin
Published : 14 April 2008, 04:28 AM
Updated : 14 April 2008, 04:28 AM

এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় লেখক-কবিদের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। প্রায় সব সময়ই প্রথম বই লেখক/পাঠকদের জন্য বিশেষ গুরুত্ববাহী। প্রথম বইয়ের ব্যাপারে লেখক যেমন যত্নশীল থাকেন, পাঠকও থাকেন তেমনি সহনশীল। সে কারণে প্রথম বইয়ের সঙ্গে আবেগ-উদ্দীপনার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। এবারে যাদের বই প্রথম বারের মত বের হলো এমন কয়েকজন লেখকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাদের বই সম্পর্কে। আরো যারা এবারে প্রকাশিত নিজের প্রথম বই সম্পর্কে জানাতে চান তাদের প্রতি আর্টস-এর ঠিকানায় (arts@bdnews24.com) লেখা ও প্রচ্ছদের ছবি পাঠানোর অনুরোধ রইল।
বি. স.

অভিজিৎ দাস

'নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ'। গ্রন্থের নাম শুনে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, বিশেষত বইটি নিয়ে যাদের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। অনেকেই অবাক হয়েছেন, পরী আবার নিগ্রো হয় নাকি? তা-ও সেই পরীর হাতে কিনা আবার কামরাঙা। পরীর তো হাত থাকার কথা না! পরীদের তো ডানা আছে, যাতে ভর করে ওরা উড়ে বেড়ায় যেখানে খুশি। যাক, না হয় ধরা গেল যে ডানার আবডালে ওর দুটি ফুটফুটে ছোট হাতও রয়েছে। তবে এত কিছু থাকতে কেনই বা সেই হাতে কামরাঙা এত গাঢ় সবুজের শিহরন তুলবে! এত এত অনুন্মোচিত রহস্যের ধুম্রজালে আমি মৃদু হেসে মাথা নেড়ে সবার কথায় সায় দেই। মনে পড়ে, গ্রন্থটির প্রসবসম্ভবা সেই দিনগুলো। প্রথমবার ১৯৯৯ সালে, যখন আমার কবিতা লেখার বাল্যকাল, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটি কাব্যপুস্তিকা প্রকাশের। নাম রাখা হল 'পথে হাঁটা বিকেল ও গন্তব্য'। একটি সাময়িকপত্র বিজ্ঞাপনও ছেপেছিল আমার প্রকাশিতব্য বইয়ের। সেই থেকে শুরু, সেদিনের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা হার মেনেছিল অস্বচ্ছলতার কাছে। আজ নয় বছরের ব্যবধানে যখন আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেল, কিন্তু গ্রন্থে সংকলিত এইসব কবিতার জন্মলিপি, বিচ্ছিন্ন অনুভূতিমালার সামষ্টিক অবয়ব ও এর গঠন, প্রকৃতির বাইরেও যে অপ্রকাশ্য আবেগ, সংবেদন, বেদনা, আনন্দ, ক্রোধ, প্রতিশোধ প্রবণতা, অক্ষমতা, নিজের রুগ্নতার আড়ালে নিজেকেই লুকিয়ে রাখা, আত্মহন্তারক হবার বাসনা–এ সবকিছুকে লিপিবদ্ধ করা যাবে সেই ভাষা কি আমার জানা আছে? যে লেখাগুলিকে গ্রন্থভুক্ত করে সাজিয়ে গুছিয়ে 'এটি একটি কাব্যগ্রন্থ' বলে ছুড়ে দেয়া হল পাঠকের হাতে, সেইসব পঙ্‌ক্তিমালা কি প্রস্তুত এমন করে সকলের মননে আশ্রয় নিতে কিংবা প্রত্যাখ্যাত হতে? আমার ওদেরকে নিয়ে ভয় হয়, ভীষণ। আবার যখন নিজেরই রচিত কোনো পংক্তি নিজের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়, তুমুল বাক-বিতণ্ডায় আমাকেই অস্বীকার করে, তখন এই ভেবে আশ্বস্ত হই যে, আর যাই হোক, ওরা অনাথ নয়। ওদের জন্ম-ইতিহাসে আছে, কারো সঙ্গে না হোক, অন্ততঃ আমার সম্মুখে তো কথা বলে ওঠে ওরা। এও কি কম সান্ত্বনার! শৈশবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলাম 'মোরগের লড়াই'য়ে। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে ধাক্কাধাক্কিতে পেরে না উঠে হেরে গিয়েও সান্ত্বনা পুরস্কার হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। সেই থেকে আমি আর কোনো প্রতিযোগিতার খাতায় নাম লেখাইনি, ঐ সান্ত্বনা পুরস্কারের দিকে তাকিয়ে থেকেই শান্তি অনুভবের পদ্ধতি আয়ত্ত করে ফেলেছি। কবিতা আমার জন্য এমন একটি সান্ত্বনা পুরস্কার হয়ে চেতনার শূন্য পৃষ্ঠাকে ভরাট করে চলুক, চিরকাল। আর নিগ্রো পরীর হাতেও জ্বলে উঠুক সবুজ কামরাঙা।

নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ / শিল্পরূপ / প্রচ্ছদ: শাওন আকন্দ / ৬৪ পৃষ্ঠা / ৭৫ টাকা

মাসুম মোকাররম

জীব-জগতের সকল প্রাণী কোনো না কোনো শস্যদানা খেয়ে জীবনকে ধারণ করে। তার মধ্যে শুধুমাত্র মানুষ খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি তার চারপাশের নানান অভিজ্ঞতা অনুভব নিয়ে বেঁচে থাকে। এবং এ সমস্ত ধুয়া-ধুলো-ঘাম-কাম-ক্লেদ-রিরংসা-আনন্দ সবই মানুষকে শিহরিত করে। আমি আমার কাব্যগ্রন্থ শিহরিত শস্যদানায় সম-সাময়িক বিশ্বের অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা, আধিপত্যবাদ, বিশ্বায়ন, ইয়াঙ্কি হুমকী এবং ব্যক্তিগত অনুভবের কথা বলতে চেয়েছি।

এটি আমার প্রথম গ্রন্থ। আমার সময়ের কবিদের প্রায় সবারই গ্রন্থ হয়ে গিয়েছে অনেক আগে। সেদিক থেকে আমার গ্রন্থ প্রকাশ বেশ পরেই হলো। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ আমার কাছে এক মিশ্র অনুভুতির জন্ম দিয়েছে। বইটি কেমন হবে, পাঠক বন্ধুরা কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে এ নিয়ে দ্বিধা তো ছিলোই। আরো সমস্যা হয়েছিলো কবিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। যাই হোক, তারপর বই বেরিয়ে গেলো। কিন্তু বইটির ছাপাশৈলী যতটা নান্দনিক হবে বলে মনে করেছিলাম তা হলো না। ফলে স্বপ্নভাভার বেদনাও সহ্য করতে হলো।

শিহরিত শস্যদানা / পাঠসূত্র / প্রচ্ছদ: শাহীনুর রহমান / ৬৪ পৃষ্ঠা / ৮০ টাকা /

মামুন খান

জল ও জলপাই আমার প্রথম বই। প্রথম বই বলেই এ পর্যন্ত আমার লেখা যাবতীয় কবিতা থেকে বাছাই করে সেরা কবিতাগুলোই রেখেছি এই বইয়ে। প্রায় শতাধিক কবিতা নিয়ে প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করি। সেখান থেকে নানা দিক বিবেচনা করে (নানা দিক বলতে বিষয়, ভাষা, নিজের ভালো লাগা ও দুর্বলতা, ঘনিষ্ঠজনদের মতামত, পাঠকরুচি ইত্যাদি।) শেষ পর্যন্ত বইয়ে কবিতা রাখি আটত্রিশটি। প্রথম বইয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা ঘটে, প্রতিষ্ঠিত কবিদের কোনো না কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এ বিষয়টিও আমি এড়ানোর চেষ্টা করেছি। বাংলা কবিতার পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন, এগুলো নতুন ধরনের কবিতা; একজন নতুন কবির লেখা কবিতা।

জল ও জলপাই মেলায় আসার পর আমার প্রত্যাশার চেয়েও বহুগুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। যারা কিনেছেন তারা প্রায় সবাই সাহিত্যের লোক, কবিতার মানুষ। বইটি পড়ে পাঠতৃপ্তি ও ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন অনেকেই। আমার প্রথম বই নিয়ে এখনও পর্যন্ত সময়টা আনন্দময় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।

আমার প্রথম বইয়ের সাথে যে নামটি চিরদিন জড়িয়ে থাকবে, সেটি হলো–ঐতিহ্য। ঐতিহ্যের নাঈম ভাই রাজি না হলে জল ও জলপাই হয়তো এবার পাঠকদের হাতে পৌঁছত না। এ ছাড়া রুদ্র আরিফ, বিজয় আহমেদ, ফেরদৌস মাহমুদ, সরোজ মোস্তফা, জুয়েল মোস্তাফিজ এবং শামীম রেজা–এই নামগুলো জল ও জলপাই থেকে কোনোদিন মুছে যাবার নয়।

জুয়েল মোস্তাফিজ

বই প্রকাশের পর সব কিছু তরল হয়ে গেল। তরল বলছি এই কারণে কঠিন বস্তুর জ্বালা ভূমিষ্ট আকারে মুক্তি পেলো। আমার ভেতরের ব্যথা সুরগুলো কবিতা হয়ে ছিলো। সেগুলোর আশ্রয় হিসাবে এই বইটি যখন বেরুলো তখন মনে হয়েছিলো একটা স্থায়ী আবাস হলো কবিতাগুলোর। এটা আমার জন্য খুব আনন্দের, শান্তির। পৃথিবী আমাদের আবাসস্থল। পৃথিবীটা বর্তমানে খুব অস্থির। অস্থির পৃথিবীর মানুষ। আমরা যারা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ আমাদের সমস্ত ব্যথা সুর হয়ে বের হয়। আমার ব্যথাগুলোও সুর হয়েছে আমার কবিতাগুলোয়। পৃথিবীকে একটা জুয়ার আসর মনে হয় আমার। সমাজ, শাস্ত্র, রাষ্ট্র, পরিবার এমনকি বস্তুজগত প্রাণজগতের প্রতিটি ক্ষেত্রই জুয়ার ক্ষেত্র মাত্র।

জুয়ার আসরে কোনো আঙুলই মিথ্যা নয় / অনন্যা / প্রচ্ছদ: আশরাফুল হাসান / ১০০ টাকা

রনজু রাইম

নিজের রচনা সম্পর্কে লেখার চেয়ে বড় স্ট্যান্ট আর কী হতে পারে। আর তা যদি হয় কবিতা তাহলে লেখার এই বিষয়টি অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা কবিতার পাঠ এবং পাঠোদ্ধারে, পাঠক এবং সমালোচককে অবশ্যই ভাবনার সুযোগ দিতে হবে। নিজের কবিতা সম্পর্কে লিখলে একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড দাঁড়িয়ে যায়। অথবা পাঠক সেটাকে নিগেট করেন কিংবা নিরুৎসাহ দেখান। আমার প্রথম কবিতার বই চিত্রল প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু লিখতে বলায় আমাকে এই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। শক্তিশালী স্বল্পসংখ্যক লেখকের দিন চলে গিয়ে স্বল্প শক্তিশালী বহুসংখ্যক লেখকের দিন আসছে–প্রমথ চৌধুরীর দুর্ভাবনার কাল সম্ভবত এইটেই । এবার (২০০৮) একুশের বইমেলায় কবিতার বইয়ের প্রকাশনা শীর্ষ অবস্থানে যদিও আছে–তবু পাঠযোগ্য কবিতার বই ক-খানা। প্রায় সকলেই নিজের বই সম্পর্কে ঢাক পেটানো, দশকবাজি, মোড়ক উন্মোচন, প্রকাশনা উৎসব, বিজ্ঞাপন বিপণন নিয়েই ব্যস্ত আছেন। আর এসব অশোভন তৎপরতার পেছনেই ধরা পড়ছে তাদের প্রস্তুতিহীন কবিতা-যাত্রা। কবিতার মাঠকে রেসকোর্স ময়দান ভেবে অনেকে ভুল করেন। কবিকে হতে হবে নির্লোভ, কৃত্যের প্রতি সৎ ও নিষ্ঠাবান এবং পরিহার করতে হবে অশুভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

চিত্রল প্রতিবেদন / প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ /


রাশেদুজ্জামান

কবিতা কি শিল্প মাত্রই তার খণ্ড-সময়ের পরিপ্রেক্ষিতকে মহাসময়ের পরিসরে পৌঁছিয়ে দিতে চায়; আমার দেশ-কালকে, যা সহজেই ছায়া ফেলেছে, ধরতে গিয়ে দেখেছি, কিছুই ধরা যায় না; কেননা সুস্থির নয় কিছুই। যাকে বলি বাস্তব তা-ও এত রঙ পাল্টায়, গিরগিটির চে বেশি–মেশামেশি করে থাকে অধিবাস্তবতা কি পরাচৈতন্যের ঘোর। আর বিশ্বায়িত প্রহরে দেখি কোনো দেশ কি ভূগোলে আমার ঠিকানা নাই…। উন্মুল করে দেওয়াই চারিত্র। পরিত্যাক্ত শিশু মুসার ঝুড়িতে ভেসে ভেসে সময়ের হাঙর-ঢেউ পাড়ি দিচ্ছি প্রায়-গন্তব্যহীন। ফলে এই বইয়ে আমার কাজ হয়েছে সেই অশ্রু, সেই দাহ, সেই অসহায়ত্বকে সঙ্গে নিয়ে কুহক ও বিষণ্ন-কৌতুকে ভরা এই যাত্রার পথরেখা নির্মাণ করা।

পাখি ও প্রিজম / র‌্যামন পাবলিশার্স / প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান / ৮০ টাকা

মাহমুদ শাওন

আততায়ীর চোখ আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এই গ্রন্থটি প্রকাশের অনুভূতি একই সঙ্গে বেদনার ও আনন্দের। বেদনার এই জন্য যে, গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলো দীর্ঘদিন থেকে আমি আমার ভেতর ধারণ করে, লালন করে চলছিলাম। এগুলো একান্ত আমার হয়ে আমার কবিতার পরিচয়ে পরিচিত ছিল। কিন্তু যেইমাত্র গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হলো, সেই থেকে কবিতাগুলো আর আমার একান্ত হয়ে রইলো না। এগুলো এখন আততায়ীর চোখ নামক একটি কাব্যগ্রন্থের পরিচয়ে পরিচিত হতে থাকলো (থাকবে)।

আর আনন্দের এই জন্য যে, গ্রন্থ প্রকাশ করা মানে, এক অর্থে, দায় এড়ানোর কৌশল। আততায়ীর চোখ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাকে আমি মুক্ত করে দিয়েছি। এখন সমস্ত দায় পাঠকের। পাঠক যা বলবে সেটাই চূড়ান্ত। সেখানে আমার আর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সেই অর্থে মুক্তির আনন্দ পাচ্ছি।

বইটি প্রকাশ করার পেছনে যাদের অবদান অসামান্য, তাদের কথা না বললে ভয়ঙ্কর অপরাধবোধে ভুগবো। আমার মতো একজন অতিশয় তরুণ কবিতাকর্মীর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করার জন্য স্বাভাবিক অর্থে প্রকাশক পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। কবি শামীম রেজা ও কথাসাহিত্যিক সালমা বাণীর একান্ত প্রচেষ্টায় গ্রন্থটি প্রকাশ করতে আগ্রহী হয়েছেন 'অনন্যা' প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক। গ্রন্থটি প্রকাশ করতে গিয়ে সবার অকৃত্রিম সহযোগিতা আমাকে ঋণী হওয়ার আনন্দ দিয়েছে। শামীম ভাই, সালমা আপা, মনির ভাই এবং আমার সময়ের কবিবন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কোনো ভাগশেষ রইলো না।

আততায়ীর চোখ / অনন্যা / প্রচ্ছদ: আমজাদ আকাশ / ৪৮ পৃষ্ঠা / ৭৫ টাকা

মাহাফুজা হিলালী

মেয়েদের মনের গোপন বই প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন কবিতায়। কবিতাগুলি প্রতিটি নারীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যই আমার আঁকুতি। আমি খুব সহজ ভাষায় লিখেছি তবে একটু কঠিন বোধ–নারীমুক্তির বোধ এতে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া কিছু অন্য রকম কবিতাও আছে। তাতেও একটি চিরন্তন বইবোধ প্রকাশিত হয়েছে।

স্বীয় সঙ্গোপনে / পাঠসূত্র / প্রচ্ছদ: আমিনুর রহমান মুকুল / ৪৮ পৃষ্ঠা / ৭০ টাকা

অরণ্য প্রভা

অনেকে প্রথম বই প্রকাশের খুব আনন্দ উপভোগ করেন। কিন্তু আমার প্রথম বই প্রকাশের পর খুব কষ্ঠ হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে এজন্য যে গল্পগুলো পুনর্পাঠের পর যে বিনির্মাণের চেষ্টা ছিল তা আর সম্ভব না। ভাবতে বিস্মিত হতে হয় শূন্যদশকে গল্পকারের সংখ্যা কী কম!
গল্পগুলো পাঠে প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরের অনেক কিছুই জানতে পারবেন। যেমন: বন্যার বর্নণা, ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধানের বর্ণনা, সেক্যুলার জীবনযাপনের বর্ণনা ইত্যাদি। কোনো ঘটনার বিনির্মাণ নয়–গল্পগুলোকে আমি নির্মাণই করতে চেয়েছি।

পঞ্চমী তৎপুরুষ / ব্যাস / প্রচ্ছদ: শাহীনুর রহমান / ১০০ টাকা

পার্থ সারথি দাস

আমার প্রথম বই শনিকাল। এটি উপন্যাস। এখানে স্মিতা মূল চরিত্র। বয়স ৫৭। উনসত্তর একাত্তরে যে মিছিল দেখেছে। রমেন তার স্বামী। মারা যায় ২৫ মার্চের রাতে। দগদগে ক্ষত নিয়ে স্মিতা লিখতে বসে মধ্যরাতে। অতীত ও বর্তমান উঠে আসে। এখানে ৩৬ বছরকেই মনে হয় 'শনিকাল'।

প্রথম উপন্যাস বের হয়েছে এজন্য ভালো লাগছে। আত্মবিশ্বাস বাড়ছে বিক্রি হচ্ছে দেখে। আগামী মেলায় আবারো আমার বই আসবে, বেশ বিক্রি হবে, সমালোচনা হবে ভাবতে পারছি। এর মূল প্রেরণা আমরই শনিকাল

শনিকাল / পাঠসূত্র / প্রচ্ছদ: অতনু তিয়াস / ৮৭ পৃষ্ঠা / ১১০ টাকা

মূর্তালা রামাত

কবিতা সময়, সাধনা ও স্বপ্ন। অনেক বছর চর্চার পর সাহ্রস করে প্রকাশ করলাম আমার প্রথম কবিতার বই কষ্টালজিয়া। বইটিকে একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাঠ বলা যেতে পারে। প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, বিশ্বায়নসহ সমসাময়িক বিশ্ব ও বাংলাদেশকে এই বইয়ের মাধ্যমে আমি তুলে ধরতে চেয়েছি। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি স্বাভাবিকভাবেই ভাষায় প্রকাশ কাঠামোর বাইরে। তবে বইটি প্রকাশ করার পর পাঠক হিসেবে বইয়ের অনেক কবিতাই আমাকে পূর্ণ সন্তুষ্টি দিতে পারেনি। ভবিষ্যতের বইয়ে আরো মনযোগ দেয়ার প্রত্যাশা করি। এ সময়ে অনেকেই ভালো লিখছেন, তাদের ভেতর আমার অবস্থান কোথায় হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে কবি হিসেবে নিজের প্রথম বই কষ্টালজিয়ার প্রতি আজীবন আমার দুর্বলতা থাকবেই।

কষ্টালজিয়া / বৃক্ষ / প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান / ৬৪ পৃষ্ঠা / ৭০ টাকা

বিজয় আহমেদ

প্রথম বই প্রকাশ হবার পর থেকেই যে তীব্র আনন্দ অনুভব করছি তা অজস্র বাক্যেও বলে শেষ করা যাবে না। শুধু এটুকু বলা যায় এ সার্কাস-তাঁবুর গান-এর জন্যেই দূর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে আসা। এই তো আবারো হয়ত চট্টগ্রাম চলে যাবো, কিন্তু মনটা ঠিকই পড়ে থাকবে বইমেলায়, উল্লেখ-টিমওয়ার্ক-এর স্টলে, আর প্রিয়তম গ্রন্থটির প্রতিটা পৃষ্ঠায়।

আর আমার কবিতার বিষয় নিয়ে যদি বলতে হয়, তাহলে বলি, এ পৃথিবীর প্রতি ধুলি ও পাতার প্রতি, নারী ও যৌনতার প্রতি আমার যে মুগ্ধতা তাই আমার বিষয়। আমি নয়, এইসব মুগ্ধতাই বরং আমাকে রচনা করেছে।

সার্কাস-তাঁবুর গান / টিমওয়ার্ক / প্রচ্ছদ: মাহবুবুল হক /