সোনালি চট্টোপাধ্যায়

mannan_syed
Published : 19 Jan 2008, 07:45 AM
Updated : 19 Jan 2008, 07:45 AM

এক কাপ রঙ-চা

রেস্তোরাঁ। নির্জন। বসে আছি। সামনে রঙ-চা। সামনে তুমি। টেবিল। শাদা খাতা। একটি আঁচড় পড়েনি। অক্ষর না। শব্দ না। নিদাগ। শাদা। বৃষ্টির রঙের মতো বিশুদ্ধ। ওই শুদ্ধতা আমাকে বলে : পবিত্রতা নষ্ট কোরো না। তোমার-আমার সম্পর্কের পবিত্রতা। লিখো না। কবিতা না। গদ্য না। রঙ-চায়ে চুমুক। ও বলছে : তা-ই দাও। চামচ। কাঁটাচামচ। ফুলদানি। রঙিন ফুল। গোলাপ। ফুলের মতো টিশুপেপার। এক টেবিলের ব্যবধান। অনন্ত ব্যবধান। ছোঁয়া-যায় এমন দূরত্ব। বাইরে দুপুর। কার্তিক মাস। তারার মতো রঙ। দুপুর একটা তারা। রঙ-চায়ে চুমুক। সোনালি তরল। সোনালি চট্টোপাধ্যায়। টেবিলে কালো অক্ষর না-পড়া শাদা খাতা। কথা নেই চুম্বনও শব্দহীন। শুধু দু-জোড়া ঠোঁটের ছোঁয়া। আলতো। অনন্ত। দিগন্তহীন। কার্তিকের দুপুর। অপরিসীম। নিরক্ষর শাদা খাতা। আঙুল না। হাত না। শুধু ঠোঁটের স্পর্শ। একটুখানি। শ্রেষ্ঠ পানীয়। পবিত্রতা। ফুল ফুটে আছে। রঙিন। টিশুপেপার। শাদা ফুল। পবিত্রতা। মুখোমুখি। দুজন। নির্জন। কথা নেই। কথা বললে ভেঙে যাবে। বসে আছি। মুখোমুখি। তুমি। এক কাপ রঙ-চা। সোনালি চট্টোপাধ্যায়।

জীবন কিরকম

সোনালিকে পাওয়ার জন্যে দশক দশক ধরে ছুটে যাচ্ছি, সোনালিও আমার জন্যে কোত্থেকে ছুটতে আরম্ভ করেছিল জানি না, যখন আমরা মুখোমুখি দাঁড়ালাম একই রাস্তার দুধারে, অনেক দিন পরে দেখতে পাচ্ছি পরস্পরকে, হাত উঁচিয়ে দুজনই একসঙ্গে সম্ভাষণ জানালাম, দুজনই চেঁচিয়ে বললাম, 'এসে গেছি !' সেটা অবশ্য শোনা গেল না। শুধু ওর মুখের গোল হাঁ দেখতে পেলাম। ও দেখল আমার চোখে-মুখে আশ্চর্যবিস্ময়। তখনই স্রোতের মতো চলতে শুরু করেছে বাস্, মিনিবাস্, ট্রাক্, টেমপো, সিএনজি, মিশুক, ঠ্যালাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, রিকশা। আর কাছাকাছি কোথাও কোনো জেব্রাক্রসিং ছিল না। জানা ছিল না অন্তত। 'সোনালি! সোনালি!' বলে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। আমার চিৎকার গাড়ির চাকার নিচে চলে গেল। হওয়ার কথা ছিল চিত্রী, হলাম শব্দশিল্পী। নারীর দিকে ফিরেছি যখন, তখন দেখি গাছের ডালপালার ভেতর থেকে জিভ সাঁৎ সাঁৎ করে ঠিক আমার দিকেই ঘন ঘন তাকাচ্ছে একটা লতার মতো লিকলিকে সরু সবুজ সাপ। মুগ্ধ হয়ে তারা-ভরা আকাশ দেখছিলাম। কাঁধে হাত রেখে অভিমানভরে সোনালি বলল, 'আমার দিকে কোনোদিন ফিরে তাকাওনি তুমি!' যেখানে ছিলাম গতকাল, আজ আমি সেখানে নেই। চুম্বন করতে গেছি, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মৃত্যুযাত্রী যখন, তখন আলতো করে কপাল ছুঁল আমার। যাকে বলি সন্ধ্যাবেলা, তা আসলে ভোর। যাকে বলি রাত্রি, সে-ই তো নারী। দার্শনিকের অতল ভাবনার মধ্যে তাঁর অজ্ঞাতসারে মিনারের মতো উঁচু হয়ে ওঠে তাঁর শিশ্ন।

ভুলতে পারব না—আমাকে ভুলে যাস

তুমি এখন কোথায়—স্বপ্নে না ৫১ নম্বরে নাকি অন্যকোথাও—এই অফিসে এ্যাকাউন্ট অফিসার ছিলাম—ইন্সপেকশনে ছিলাম কত বছর—লেখক হিশেবে সফল কিনা জানি না—এখন চিনে না আর-কেউ—সকালে উঠে কেঁদেছি—লাভ নাই—ক্রমোন্নতির আরো উচ্চ লক্ষণ হচ্ছে উপলব্ধি বেদনা অনুভবের উন্নয়ন—তুমি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছ—রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়বে—আগের রেটে হবে না—হে দুপুর—এইসব বেলোয়ারি অনুভব লিখতে ভাল্লাগে না আর—লিরিক দিয়ে কিছু হবে না—লিরিকের … মারি—ভলতেয়ারের কথা মনে হয়—তলস্তয়—আগুন আর মৃত্তিকা—সিলেটে একবার দেখেছিলাম দীর্ঘ এক মাঠের ভেতরে ছোট ছোট অগ্নিশিখা জ্বলন্ত—গ্যাসফিল্ড আছে মাঠের নিচে—ঘাসও পুড়ে গেছে—ভেতরের আগুনে পুড়ে গেছি আমি—ভুলতে পারব না—ভিক্তর উগো—আপনি একটু লাইনে থাকেন—আপনি একটু ধরেন—পুরোনো ডায়েরিতে দেখলাম—আমাকে ভুলে যাস—এই দ্যাখো তো জোসেফবাবু আছেন কিনা—কেন দেখা হলো তোমার সঙ্গে—আমাকে কেন পরিপূর্ণ করে দিলে—এত পরিপূর্ণ—উপচে পড়ছে—কেন আমাকে এত শূন্য করে দিলে—ভালো আছেন তো স্যার—সাধারণ মানুষকে নিয়ে লিখিনি কেন এতকাল—ঘেন্না হয় নিজের ওপর—কতকাল আগে বলেছিল আহমদ ছফা—তুমি স্বপনে গঠিত—আমি কী করব—আমি-যে ওইভাবে তৈরি—ভেতরে অগ্নিশিখা জ্বলছে—কেন লিখিনি—কেন লিখিনি—তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি—রুপোর চাঁদের কষ্ট—সোনার আলোর বেদনা—হে দুপুর—তোমাকে দেখার পরদিনই কবিতা লিখলাম—আচ্ছা আমি আলাপ করে রাখব—বিশ টাকা দিয়ে দ্যায়—হে হৃদয়—এই সিরিয়ালের কোনো ঠিক নাই—জ্বি—তোমাদের বাড়ির ওপরে কিএকটা আলো জ্বলে—অনেক রাতে দেখি—ধন্যবাদ—না না কী বলেন সিরিয়ালের কোনো মা-বাপ নাই—ভুলতে পারব না—আমাকে ভুলে যাস—ডুবে যাও নিজের ভেতরে—

জানুয়ারি ২০০৮