ত্‌লাংময় স্বপ্নচূড়ায়

sajal_khaled
Published : 25 Feb 2008, 08:12 AM
Updated : 25 Feb 2008, 08:12 AM

কেওক্রাডং কিংবা তজিনডং (বিজয়) নয়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়ের নাম ত্‌লাংময় স্বপ্নচূড়া (৩৪৬১ ফুট)


ত্‌ল­াংময় স্বপ্নচূড়া

ভূমিকা
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় নিয়ে কিছু বাদানুবাদ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় আরোহনকারী একটি চালাক দল (যাদের সাথে ফেরার পথে আমাদের দেখা হয়) আমাদের চার/পাঁচ দিন পর শিখর বিজয় করে ফিরে এসে তড়িঘড়ি করে আমাদের সংবাদ সম্মেলনের দুদিন আগেই কয়েকটি পত্রিকাতে তাদের লেখা ছাপানোর ব্যবস্থা করে। অনৈতিকভাবে তাদের লেখায় প্রথম বিজয়ী দলের কথা না লিখে তারা নিজেদের কথাই বলে এবং আমাদের নির্ধারিত নাম উপেক্ষা করে নতুন একটি নাম তারা ঘোষণা করে। প্রসঙ্গতঃ বিশ¡ব্যাপী নামবিহীন অপরিচিত শৃঙ্গের নামকরণ করে থাকেন প্রথম বিজয়ীরা।

একটি জাতীয় দৈনিকে রিপোর্টে বিভ্রান্তকর বক্তব্য এবং ভুল তথ্যের মিশেলে পুরো ব্যাপারটিকে গোলমেলেভাবে উপস্থাপন করা হয়। পরে আমাদের পাঠানো একটি প্রতিবাদ তারা আংশিক প্রকাশ করে।

প্রথম সমতলের বাঙালি হিসাবে দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গবিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর খুটিনাটি নির্ভুল রাখা জরুরি।


ত্‌ল­াংময় স্বপ্নচূড়ায় অভিযাত্রীদল

পর্বতারোহী জিং ফালেন
এই খবরটি শুনলে কেমন লাগবে যে বিশ্ববিখ্যাত বৃটিশ পর্বতারোহী জিং ফালেন ২০০৫ সালে প্রথমবারের মত আরোহণ করার আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়টি এতদিন সবার অলক্ষে রয়ে গিয়েছিল!

বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত এই সুঠাম সুন্দর পাহাড়টিতে আমরা যাবার পরিকল্পনা করি ডিসেম্বর মাসে। অভিযান শুরু করার আগেই গুগুল আর্থ দেখে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলাম যে জিং ফালেন আমাদের সাথে রসিকতা করেন নি। যাবার আগেই আমরা পাহাড়টির নাম দিয়েছিলাম "ত্‌ল­াংময় স্বপ্নচূড়া" (সুন্দর পাহাড় স্বপ্নচূড়া)। ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে ১৯ ডিসেম্বর রাতের বাসে বান্দরবান পৌঁছলাম আমরা ছয়জন। পরিণত পক্ককেশ তরুণ ইয়াহিয়া খান, আমি সজল খালেদ, ওয়ালিদ আশরাফ গিনি, অপার আহমেদ, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং উম্মে হাবিবা শশী। একই বাসে টিকেট না পেয়ে আলাদা রওনা হলেন মির্জা জাকারিয়া বেগ।

থানচিতে গুঞ্জন
সাতসকালে বান্দরবান পৌঁছে দেখা পেলাম অপেক্ষারত তরুণ গাইড জালিয়ান বম, মুয়ান থাং বম এবং লালসোম বম-এর। বাসস্টেশন থেকে থানচি যাবার জন্য একটি চাঁদের গাড়ি ভাড়া করে নাস্তা খেয়ে রওনা দিতে দিতে দশটা বেজে গেল। বান্দরবান থেকে থানচি যাবার রাস্তাটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর দৃশ্যসম্বলিত রাস্তা। পথের মাঝে বলিপাড়া আর্মি ক্যাম্পে অবস্থানকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করে গেলাম। দুপুরে থানচি পৌঁছতেই বোলতার মতো ছেকে ধরল পুলিশ এবং বিডিআর। সবার একই বিস্ময়, ঈদ ফেলে কেন আমরা এই দুর্গম স্থানে এলাম! দফায় দফায় আমাদের সাক্ষাৎকার দিতে হলো একের পর একজনের কাছে। বিকালে আমাদের চমৎকৃত করে ঢাকা থেকে পৌঁছালেন মির্জা জাকারিয়া বেগ।

পরদিন সকাল ছ'টায় তৈরি হয়ে বসে আছি বের হবার জন্য, কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক নাটক করে শেষ পর্যন্ত বেলা এগারটায় অতিরিক্ত মুরো গাইড সম্পদকে নিয়ে ট্রেকিং শুরু করলাম। ঘণ্টা চারেক পরে পৌঁছালাম মুরোগ্রাম বোডিং পাড়াতে।

কুংলা পাড়ার আহত শিশু
আমরা যে পাহাড়টিতে যাব, তার কাছাকাছি গ্রামের ছবি এবং অবস্থান দেখে চেষ্টা করছিলাম পৌঁছাতে। শেষ পর্যন্ত আরো ঘণ্টা দেড়েক হেঁটে প্রায় সন্ধ্যায় পৌঁছালাম "কুংলা পাড়াতে"। মুরোদের ছোট্ট পাড়া কুংলাতে পৌঁছে কারবারীর ঘরে ম্যাট ও স্লিপিং ব্যাগ বিছিয়ে নিজেরা রান্না করে খেলাম। খাবার রান্না করার ফাঁকে সবাই মিলে সামান্য পানীয়ের সাথে বিশাল এক গামলা মুড়িমাখা শেষ করলাম। ঢাকা থেকে উপহার নিয়ে আসা বাচ্চাদের খেলনা এবং চকোলেট বিলানোর মধ্যে দিয়েই শেষ হলো ট্রেকিং-এর প্রথম দিন। ভোরবেলায় একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠে তৈরি হতেই জানা গেল এ পাড়ায় একজন গুরুতর আহত শিশু রয়েছে। ভয়ঙ্করভাবে চেরা পা'তে চিকিৎসা দিলেন অপার আহমেদ। তীব্র পাহাড়ি প্রাণশক্তির জোরে হয়ত এই শিশুটি আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।

লালরামময় মাস্টার
আজকের গন্তব্য বমপাড়া বাকলাই। বাকলাইতেই থাকেন লালরামময় মাস্টার,


বাকলাইপাড়ার বাসা

যিনি ২০০৫ সালে জিং ফালেনের সাথে ত­াংময় স্বপ্নচূড়ায় গিয়েছিলেন। তিনটার দিকে বাকলাই পৌঁছে জানতে পারলাম যে সকালেই তিনি থানচি গিয়েছেন এই পথে। হতাশায় বিষিয়ে যাওয়া মনে আশার আলো ফিরে এল যখন তিনি রাতে ফিরে এলেন। দুদিন পরেই বড়দিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ফেলে মাস্টার কিছুতেই যেতে চাইছিলেন না। আমাদের অনেক অনুরোধের পর লালরামময় কথা দিলেন পরদিন ভোরে তিনি আমাদের নিয়ে রওনা হবেন ত­াংময় স্বপ্নচূড়ার উদ্দেশ্যে।

HF রাস্তা আর সবুজ রেমাক্রী খাল
খুব ভোরে রাতে বানিয়ে রাখা খিচুড়ি খেয়ে দরকারী সরঞ্জাম ব্যাকপ্যাকে ভরে রওনা দিলাম। প্রথমেই থামতে হলো বাকলাইপাড়ার অদূরে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পে। ক্যাম্প ইনচার্জ সিদ্দিক সাহেবের সাথে সদালাপ করে বেরুতে বেরুতে প্রায় নয়টা বেজে গেল। বাকলাইপাড়া থেকে মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের পথেই তজিনডং। বেশ কয়েকঘণ্টা পরে শুরু হলো একটি পাহাড় ক্রমাগত নামা। রসিক খানভাই এই রাস্তার নাম রাখলেন HF রাস্তা। একসময় একটি পাহাড়ি ঝিরি দিয়ে আছাড় খেতে খেতে পৌঁছালাম রেমাক্রী খালে। এই খালের তীর দিয়ে যেতে হবে বেশ খানিকটা পথ আর কয়েক পা এগিয়েই বারবার কোমর ভিজিয়ে হেঁটে পার হতে হবে। প্রায় টারজান সাজে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে ভীষণ ঠাণ্ডা সেই অদ্ভুত সুন্দর সবুজ খাল পথে গেলাম বেশ খানিকটা। এবার খালটি আছড়ে পড়ছে অনেকটা নিচে একটি ঝর্না হয়ে। এখানটা বোঁচকা নিয়ে পার হওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকজন ডুবে মরতে বসেছিলাম এই ঝর্নাতে। আমি পিছলে পড়লেও ক্যামেরাটি শুকনো রাখতে পেরেছিলাম। নদীপথ শেষ করে এক সময় আরেকটি ঝিড়ি পথে ওঠা শুরু করলাম। সব মিলিয়ে বাকলাই থেকে সাত ঘণ্টা হেঁটে আমার দেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ট্রেইল পার হয়ে শেষ বিকালে পৌঁছালাম ত্রিপুরা পাড়া শালুকিয়াতে।


শঙ্খ নদী

নিঃসঙ্গ গ্রাম শালুকিয়া আর কুকুরের শিককাবাব
এই পাড়াতে এবং আসার পথে এর আগে কোনো বেসামরিক বাঙালী আসেনি। শালুকিয়াতে ১১টি পরিবার বাস করে। সবচেয়ে দূরে অবস্থিত এই পাড়াতেও অন্যান্য পাড়ার মতো ক্যাথলিক এবং ব্যাপটিস্টদের প্রতিযোগিতা আছে। ধর্মীয় সুদূরবিস্তারী প্রভাবে আদিবাসী গ্রামগুলোর সনাতন সংস্কৃতি এখন অনেকটাই কোণঠাসা। শালুকিয়া পাড়ার অদূরেই অবস্থিত রাজসিক "ত্‌ল­াংময় স্বপ্নচূড়া"। আমাদের সব ধ্যান-ধারণা এই পাহাড়চূড়া আরোহণের জন্য। শালুকিয়াবাসী আমাদের একটি নতুন পরিত্যাক্ত ঘরে থাকতে দিলেন। বড় দিনের কারণে গ্রামে একটি উৎসবমূখর পরিবেশ। পাড়ার'ই একটি কুকুরকে প্রচলিত নিয়মে গেথে আগুনে ঝলসানো হলো। আমাদেরও দেয়া হলো দু'এক টুকরা। রাতে কিছু শঙ্কার কারণে মাথার কাছে দা রেখে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় পালাক্রমে পাহাড়া দিলাম আমি আর গিনি।

ত্‌ল­াংময় স্বপ্নচূড়ায় প্রথম বাঙালীদল
ভোর পাঁচটায় সবাই তৈরি হওয়া শুরু করলাম। রাতে বানিয়ে রাখা খাবার খেয়ে তৈরি হলাম। সিয়াম প্রু, মতিন ত্রিপুরা এবং জনারম ত্রিপুরা এই তিনজন দা দিয়ে কিছুটা রাস্তা তৈরি করবেন জঙ্গল পথে। ছটায় রওনা হয়ে ঘণ্টাখানেক পরেই জুমক্ষেত শেষ হয়ে শুরু হলো গহীন দুর্ভেদ্য জঙ্গল। যেতে

…..
ত্রিপুরা নারী
…….
যেতে যেতে সবারই হাত পা ছড়ে যাচ্ছিল। কিছুদূর পরেই পেলাম বিশাল এলাকা জুরে বাঁশবন। এই বাঁশবনে বেশ কয়েকটি পাণ্ডা হয়ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে। বাঁশের ফাক দিয়ে আরো ঘণ্টাদেড়েক উঠে পেলাম ত­াংময় স্বপ্নচূড়ার প্রথম শৃঙ্গ। নেমে দেখলাম যে এই নিচু চূড়োটিও কেওক্রাদং থেকে উচু, উল্লাসে চিৎকার করে আবার রওনা দিলাম সর্বোচ্চ শৃঙ্গের দিকে। শেষ পর্যন্ত সকাল ১০.৩৮ মিনিটে আমরা পৌঁছে গেলাম ত­াংময় স্বপ্নচূড়ার শীর্ষে। শীর্ষে যত্নে পুতে

……
বাঁশফুল
……..
রাখা একটি বোতলে পেলাম জিং ফালেনের লেখা একটি চিঠি। দুর্ভাগ্যক্রমে পানিতে ভিজে সেটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। জিং ফালেনের জিপিএসে তিনি উচ্চতা পেয়েছেন ১০৬৫ মিটার (৩৪৯৪ ফুট) কিন্তু আমরা গড়ে তা পেলাম ১০৫৫ মিটার বা ৩৪৬১ ফুট।

সে রাতে পুর্ণিমা ছিল
চূড়ো থেকে নেমে আসতে আসতে প্রায় তিনটা বেজে গেল। ইচ্ছে ছিল সেদিনই রওনা দিয়ে মাঝের একটি পাড়াতে রাতে থাকব কিন্তু সাথের ধীর ট্রেকারদের কথা চিন্তা করে সে রাতটিও আমরা শালুকিয়াতে থেকে গেলাম। রাতে বড়দিন উপলক্ষ্যে পাড়াতে বিশাল উৎসব হলো। আমাদের গাছের গুড়ির আসনে বসিয়ে বাচ্চারা নেচে ফুলের তোড়া দিয়ে আমাদের বরণ করে নিল। ধর্মশিক্ষকরা দুজন সবকিছুই আমাদের জন্য ভাঙা বাংলায় বলার চেষ্টা করছিলেন। একে একে পাহাড়িরা নাচ, গান এবং নাটক করল। আমরাও তাদের অনুরোধে গান এবং নাচ পরিবেশন করলাম। শেষে পাহাড়ি তরুণীদের সাথে চমৎকার একটি যুগল নাচ নেচে আমরা ঘুমুতে গেলাম। আকাশে ছিল বিশাল এক চাঁদ।

থ্রি কমরেডস
রাতেই ঠিক করে রেখেছিলাম জাকারিয়া বেগ, গিনি আর আমি অগ্রগামী দল হিসাবে আগে চলে যাব, সেই পরিকল্পনা মতেই আমরা তিনজন ভোর সাতটায় ফিরতি পথে ট্রেকিং শুরু করলাম। রেমাক্রী খাল আর HF রাস্তা পেরিয়ে তিনটায় বাকলাই পৌঁছে পাহাড়িদের জুমভাত আর নাপি তরকারী খেয়ে চারটায় আমরা আবার রওনা দিলাম বমাপাড়া থাইক্ষিয়াং-এর উদ্দেশ্যে। এক সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যেই রাত্রি শুরু হলো। পথ যেন আর শেষ হতে চায় না। ভীষণ দুর্গম সরুপথে টর্চের আলো ফেলে আমরা তিনজন যাচ্ছি। আজ চাঁদটিও যেন দেরী করছে উঠতে। পথ ভুলে একবার অনেকটা গিয়ে আবার ফিরে এলাম। একসময় সাতটায় পৌঁছলাম বমপাড়া থাইক্ষিয়াং'এ। বড়দিন উপলক্ষে এই পাড়াতেও বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে পরিচয় হলো ঢাকা থেকে আসা একটি দলের সাথে, মজার ব্যাপার হলো এরাও অনেক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে "ত্‌ল­াংময় স্বপ্নচূড়া" যাবার জন্য। তুচ্ছ একটা ব্যাপার নিয়ে মিথ্যে বলায় আমরা বেশিক্ষণ কথাবার্তা চালাতে উৎসাহ পেলাম না। রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো মেম্বারের বাড়িতে।

খুব সকালে উঠে স্যুপ আর বিস্কুট খেয়ে একজন স্থানীয় পোর্টারকে জাকারিয়া বেগ-এর ব্যাকপ্যাক দিয়ে আমরা রওনা হলাম। এখান থেকে রাস্তা বেশ প্রশস্ত, ঘণ্টা তিনেকে পৌঁছে গেলাম কেওক্রাডং। জনৈক লেফটেন্যান্ট সৈয়দ আরমান (মুন) কেওক্রাডং-এর চূড়োতে কুদৃশ্য একটি ছাউনি বনিয়ে সাড়ম্বরে লাল পাথরে খোদাই করে নিজের নাম লিখেছেন যা আমাদের পরিচিত সবাইকে প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। এখানে কেওক্রাডং চূড়োর উচ্চতা আমরা মাপলাম ৩১৯৪ ফুট। কেওক্রাডং থেকে আরো দুঘণ্টা হেঁটে পৌঁছে গেলাম বগা লেক। বগা লেকে ভাত, ডাল, ডিম খেয়ে আমি ছাড়পত্র নিতে নিতে শেষ জিপটিও চলে গেল। দ্রুত আরেকটি রিজার্ভ জিপ নিয়ে রওনা হলাম রুমার উদ্দেশ্যে।

জলপাই উত্তাপ
রুমাতে পৌঁছে আমরা আর্মি ক্যাম্পে নামধাম জানিয়ে দৌড়ালাম রিজার্ভ শ্যালো নৌকা নিয়ে ১ নম্বর ঘাটে। আমাদের সবার আজকেরই ফিরতি বাস টিকেট কাটা বলেই এতো ঝামেলা করে রওনা হওয়া। দুঃখে মনটা ভেঙে গেল যখন শুনলাম ১ নম্বর ঘাট থেকে আমাদের রুমা বাজার ফিরে যেতে বলা হলো। সামরিক উর্দিকে অনেক বুঝিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাম রুমাতে। ক্যাম্পে ফিরে যখন দুর্দশার কথা জানালাম তখন উল্টো তিরস্কার শুনতে হলো। যখন বলছিলাম যে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে দেশের যে কোন এলাকা ভ্রমণের, নিরাপত্তার অভাব মনে করলে প্রশাসন সর্বোচ্চ যা করতে পারে তা হলো সাথে নিরাপত্তাকর্মী দেয়া। তখন ওয়ারলেস হাতের এক সৈনিক মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, 'ওই, আপনে কি ভিআইপি নাকি যে আপনেরে সেন্ট্রি দিতে হইব!' রাতে কষ্ট করে রুমাতে থেকে পরদিন দুপুরে বান্দরবান এবং রাতে ঢাকার বাস ধরলাম।


ত্রিপুরা নাইট; এক ত্রিপুরা নারীর সঙ্গে নাচছেন লেখক।

চাই সম্প্রীতির সমাধান
এই দেশটাকে আমরা অত্যন্ত ভালোবাসি। দেশটি সব প্রান্ত ঘুরে দেখতে চাই। বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ জায়গা জুড়ে থাকা দেশের সবচেয়ে সুন্দর এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামটিকে নিরাপত্তার কথা বলে অনেক বছর ধরে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। গত দশ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে যা অপরাধ হয়েছে তার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই এলাকা দেশে সবচেয়ে নিরাপদ বলেই প্রমাণিত হবে। ঢাকায় প্রতিদিনই এই দশবছরের চেয়েও বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়। বাঙালীদের প্রতি পাহাড়িদের অবিশ্বাস দিন দিন বাড়ছে। দোষারোপের দমন নয়, সরকারের উচিত দ্রুত বুদ্ধিজীবীদের সাথে আলোচনা করে এই সমস্যা সমাধানের। আমরা সম্প্রীতির সমাধানে বিশ্বাস করি।

অভিযাত্রা ত্‌লাংময়
(বড় আকারে দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন।)

লেখকের আর্টস প্রোফাইল: সজল খালেদ
ইমেইল: sajal.khaled@gmail.com


ফেসবুক লিংক । আর্টস :: Arts