কবি মাহমুদ দারবিশের দেশে ফেরা

অবনি অনার্য
Published : 15 August 2008, 07:06 AM
Updated : 15 August 2008, 07:06 AM


মাহমুদ দারবিশ (১৩/৩/১৯৪১ — ৯/৮/২০০৮)

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনি, কিন্তু অপেক্ষা করেননি তার জন্য। কেননা, নিজেই বলেছেন তিনি, মৃত্যু যেমন অপেক্ষা করতে ভালোবাসে না, তিনিও পছন্দ করেন না অপেক্ষা। এমনকি, গত বছরই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মৃত্যুর সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়েছে। অনেক কিছু লিখতে এখনও বাকি, তাই এখনই মৃত্যু তাঁকে পাচ্ছে না।

এর আগে দু'বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি — প্রথমবার ১৯৮৪ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৮৮-তে। তৃতীয়বার ২০০৮-এ। এবার আর মৃত্যুকে পরাজিত করতে পারেননি তিনি। চলে গেলেন কবি মাহমুদ দারবিশ।
—————————————————————–

আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি ইহুদিবিদ্বেষী। এটা খুব সুখকর নয় যে, ওরা আমাকে শয়তান হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, আর চায় ইসরাইলের শত্রু হিসেবে আমাকে পরিচিত করতে। আমার, অবশ্যই, ইসরাইলের প্রতি দরদ নেই, থাকবার কথাও নয়। কিন্তু আমি ইহুদিদের ঘৃণাও করি না।

—————————————————————–

রামাল্লার পশ্চিম তীরে পাহাড়ের পাদদেশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন প্যালেস্টাইনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশ। মাত্র ৬৭ বছর বয়সে হাজারো প্যালেস্টাইনবাসীর কান্নায় প্লাবিত হলেন প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা সংগ্রামের কলমসৈনিক দারবিশ। অশীতিপর মায়ের অশ্রু তাঁর সমাধিস্থলকে স্যাঁতসেঁতে করুক — এমনই স্বপ্নবিলাসী ছিলেন তিনি!

১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ ডিস্ট্রিক্ট অব অ্যাকর'র ওয়েস্টার্ন গ্যালিলিয়ান গ্রামে, সালিম এবং হুরিয়াহ দারবিশের ঔরসে, জন্মগ্রহণ করেন দারবিশ। মুসলিম জমিদার বাবা আর অশিক্ষত মায়ের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। পিতামহের হাত ধরেই শিক্ষাজীবনের শুরু। স্টেট অব ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা সপরিবারে চলে যান লেবাননে — প্রথমে জেজিনে, এবং পরে ডামুরে। বছরখানেক পরেই প্রত্যাবর্তন করেন অ্যাকরে (যা এখন ইসরাইলের অংশ), এবং ডেইর আল-আসাদ-এ বসবাস শুরু করেন। কাফ্র ইয়াসিফে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে হাইফাতে চলে যান।

মাত্র উনিশ বছর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ আসাফির বিলা আজনিহা [উইংলেস বার্ডস] প্রকাশিত হয়। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে দারবিশ ইসরাইল (এবং ইসরাইলের নাগরিকত্ব) ছেড়ে সংযুক্ত সোভিয়েত রাশিয়ায় যান উচ্চশিক্ষার্থে। বছরখানেক পড়াশোনা করেন ইউনিভার্সিটি অব মস্কোতে। পরে চলে যান মিশর এবং লেবাননে। ১৯৭৩ সালে পিএলও-তে যোগ দিলে ইসরাইলে তাঁর পুনঃপ্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সহকর্মী-বন্ধু এমিলি হাবিবির [প্যালেস্টাইন-ইসরাইলি লেখক এবং রাজনীতিবিদ (২১/১/১৯২২ – ২/৫/১৯৯৬)] শেষকৃত্যে যোগ দেবার জন্য ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে মাত্র চারদিন অবস্থান করার সুযোগ পান। পরে অবশ্য রামাল্লার পশ্চিম তীরে বসবাসের অনুমতি পান তিনি, এখন যেখানে শাশ্বত-আবাসনের সুযোগ হয়েছে তাঁর।

দু'বার যৌথজীবনের আয়োজন করেছিলেন দারবিশ, দু'বারই বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রথমবার বিয়ে হয় লেখক রানা কাব্বানির সঙ্গে, দ্বিতীয়টি মিশরীয় অনুবাদক হায়াত হিনি'র সঙ্গে। কোনোপক্ষেই তাঁর কোনো উত্তরাধিকারী নেই। হার্টের অসুখ ছিলো তাঁর, ১৯৮৪ সালে হার্ট অ্যাটাক হলে সার্জারি করা হয়। ১৯৯৮ সালে আরেকবার সার্জারির শরণাপন্ন হতে হয় তাঁকে। শেষবার ইসরাইল ভ্রমণ করেন ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই, একটি কবিতাপাঠের আমন্ত্রণে এসে ফাতাহ এবং হামাসের দ্বন্দ্বকে "পথিমধ্যে আত্মহত্যার উদ্যোগ" বলে মন্তব্য করেন।

দারবিশের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের বেশি, গদ্যের বই আছে আটটি। সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আল-জাদিদ, আল ফাজ্র, সু'উন ফিলিস্তিনিয়া এবং আল-কারমেলের। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত আওরাক আল-জাইতুন [লিভস অব অলিভস] কাব্যগ্রন্থের 'আইডেন্টিটি কার্ড' কবিতায় তিনি লেখেন —
লেখো! আমি এক আরব/ আর আমার আইডেন্টিটি কার্ডের নাম্বার পঞ্চাশ হাজার/ আমার সন্তানসংখ্যা আট/ নবমটি অপেক্ষা করছে আসন্ন গ্রীষ্মের/ তুমি কি রাগ করবে?/ লেখো! আমি আরব এক/ আমার একটি নাম আছে উপাধিবিহীন/ একটি দেশে সুস্থির/ যেখানকার জনগণ ক্রুদ্ধ… আমি মানুষজনকে ঘেন্না করি না/ করি না অনধিকার প্রবেশও/ কিন্তু একবার যদি আমার ক্ষিধে পায়/ জেনে রেখো অনধিকার-প্রবেশকারীর মাংস হবে আমার খাবার/ সাবধান…/ সাবধানে থেকো…/ আমার ক্ষুধাতাড়নার থেকে/ আমার ক্রোধানল থেকে!

প্যালেস্টাইনের প্রতি প্রগাঢ় আন্তরিকতা, প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার জন্য আকুতি তাঁর সাহিত্যকর্মে বারবার ফিরেফিরে এসেছে। এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি এভাবেই বেশি পরিচিত। এ-সুযোগে তাঁর বিরুদ্ধপক্ষের দাবি তিনি ইহুদিবিদ্বেষী। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি ইহুদিবিদ্বেষী। এটা খুব সুখকর নয় যে, ওরা আমাকে শয়তান হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, আর চায় ইসরাইলের শত্রু হিসেবে আমাকে পরিচিত করতে। আমার, অবশ্যই, ইসরাইলের প্রতি দরদ নেই, থাকবার কথাও নয়। কিন্তু আমি ইহুদিদের ঘৃণাও করি না।

কিন্তু দারবিশের শান্তিপ্রিয় কবিতার মধ্য দিয়ে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা সংগ্রাম কতোটা বেগবান হয়েছে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। দারবিশের বেশিরভাগ কবিতার মধ্যেই প্যালেস্টাইন এসেছে রূপকার্থে। সে-অর্থে কবিতাগুলো শিল্পোত্তীর্ণ হতে পারে, কিন্তু প্যালেস্টাইনের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্যালেস্টাইনবাসীদের কাছে সেসব কবিতার সংগ্রামী আবেদন কতোখানি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবার অবকাশ আছে।
—————————————————————–

দারবিশের বেশির ভাগ কবিতার মধ্যেই প্যালেস্টাইন এসেছে রূপকার্থে। সে-অর্থে কবিতাগুলো শিল্পোত্তীর্ণ হতে পারে, কিন্তু প্যালেস্টাইনের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্যালেস্টাইনবাসীদের কাছে সেসব কবিতার সংগ্রামী আবেদন কতোখানি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবার অবকাশ আছে।

—————————————————————–
তাছাড়া, তিনি একবার পিএলও-তে যোগ দিয়ে ফের ছেড়ে গেছেন। ইসরাইলের প্রতি তীক্ষ্ণ কটাক্ষ কবিতায় খুব বেশি আসেনি, কিছুমাত্রায় এসেছে গদ্যে। ইসরাইলে তথা হিব্রু ভাষায় তাঁর অসংখ্য কবিতা অনূদিত হয়েছে। ইসরাইলের একটা অংশ চান পাঠ্যপুস্তকে দারবিশের কবিতা অন্তর্ভুক্ত হোক (২০০০ সালের মার্চে, দারবিশের কবিতা ইসরাইলের হাইস্কুল-পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সে-দেশের শিক্ষামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দেন সে-প্রস্তাবনা)। এটি কিন্তু দারবিশের কবিতার মহত্ত্ব প্রকাশ করে না, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রসঙ্গই বড় হয়ে দেখা দেয়। ইসরাইলের যে-অংশ দারবিশের কবিতা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে ইচ্ছুক, তারা যতটা দারবিশের কাব্যপ্রেমী, তার চেয়ে বেশি বর্তমান সরকার-বিরোধী। দারবিশ দাবার ঘুঁটি। প্রাসঙ্গিক একটি তথ্য দিয়ে রাখি, প্রথম প্যালেস্টাইনিয়ান হিসেবে দারবিশই প্রথম ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি আলোচনা শুরুরও আগে।

জীবনের শেষের দিকে উপসাগরীয় অঞ্চল ঘুরে ঘুরে শেইখদের জন্য অর্থের বিনিময়ে কবিতা রচনা করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তাছাড়া, আরাফাতের গোয়েন্দাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে প্যালেস্টাইনিয়ান কার্টুনিস্ট নাজি আল-আলি'র হত্যাকাণ্ডে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। দারবিশ এবং আলির কথোপকথন এরকম:

দারবিশ: আমি তোমার উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত.. তোমার কার্টুন এবং লেখালেখি আমাকে রাগান্বিত করে।

আলি: মাহমুদ, আমার কার্টুন এবং লেখা আপনাকে রাগান্বিত করাই স্বাভাবিক, কেননা আমি আপনাকে উপেক্ষা করেছি। আমি সবসময়ই আপনার মতো দ্বিচারীদের উপেক্ষা করি।

দারবিশ: আলি, লন্ডন থেকে যেকোনো মুহূর্তে তোমাকে তাড়িয়ে দিতে পারি আমি।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচাইতে জনপ্রিয় আরব কার্টুনিস্ট নাজি আল-আলি খুন হন লন্ডনের রাস্তায়। তাঁর খুন হবার পুরো ঘটনার বিবরণ, এবং দারবিশের ভূমিকা পাওয়া যাবে শাকির আল-নাবুলসির ইটেন বাই উলফ বইয়ে।

একদিকে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার কথা বলা (এখানে পিএলও ত্যাগ করার প্রসঙ্গটি মাথায় রাখতে হবে), অন্যদিকে পুরোপুরি আলাদা না-হয়ে ইসরাইল-প্যালেস্টাইন শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের কথা বলা, আবার আরবি এবং হিব্রু সাহিত্যের মধ্যে বিভাজন নিয়ে নিজের আক্ষেপের (দ্য সিজ নামক গদ্যে তিনি এ-প্রসঙ্গে বিশদ বলেছেন) কথা বলা, তাঁর দ্বিমুখীনতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। একসময় কবিতা লেখার জন্যই এ-দারবিশ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, এ-দারবিশকে নিয়েই ১৯৬৯ সালে রচিত হয়েছে "মাহমুদ দারবিশ: দ্য পোয়েট অব রেজিস্ট্যান্স", অথচ পরবর্তীকালে তিনি নিজেই নিজের সমালোচনাকে আমন্ত্রণ জানান। বৈরুতে অবস্থানকালেই তাঁর মতাদর্শগত পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

দারবিশের লেখালেখি আরবিতে হলেও কথা বলতেন ইংরেজি, ফরাসি এবং হিব্রুতে। প্রচুর পুরস্কারের পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে কুড়িটি ভাষায়। আরবি কবি আবদ আল-ওয়াহাব আল-বায়াতি এবং বাদর শাকির আল-সাইয়াব'র অনুরাগী ছিলেন তিনি। প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি এডওয়ার্ড সায়িদেরও বিশেষ অনুরাগী ছিলেন দারবিশ। তাঁকে নিয়ে কবিতাও রচনা করেছেন তিনি। ইহুদি কবি ইয়েহুদা আমিচাইয়ের বিশেষ প্রশংসা করতেন দারবিশ, যদিও তাঁর কবিতা সম্পর্কে দারবিশের মন্তব্য: "তিনিও একই স্থান নিয়ে কবিতা রচনা করেন, ফলত এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জের মতো। তিনি নিজের সুবিধার্থে সেই জমিন আর ইতিহাস নিয়ে লিখতে চান, যা আমার আত্মপরিচয়ের ধ্বংসস্তূপের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই, আমাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা কাজ করে — এই ভূখণ্ডের প্রকৃত ভাষিক উত্তরাধিকারী কে? কে বেশি ভালোবাসে একে? কে একে নিয়ে বেশি ভালো লিখতে পারে?"

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন তথা পিএলও-তে যোগ দেবার আগে দারবিশ ইসরাইলি কম্যুনিস্ট পার্টি রাকাহ'র সদস্য ছিলেন। অনুমতি ছাড়াই হাইফা ছেড়ে যাবার কারণে বেশ ক'বার তাঁকে আটক করা হয়েছে। ১৯৭০ সালে ইসরাইলি নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করে মস্কোর উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। একাত্তরে চলে যান কায়রোতে, কাজ করেন আল-আহরাম পত্রিকায়। ১৯৭৩ সালে বৈরুতে তিনি সু'উন ফিলিস্তিনিয়া (প্যালেস্টাইনিয়ান অ্যাফেয়ার্স) নামক মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন, এবং পিএলও'র প্যালেস্টাইনিয়ান রিসার্চ সেন্টার-এর ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। সে-বছরই পিএলও-তে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে পিএলও এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য করা হয় দারবিশকে। বন্ধু ইয়াসির আরাফাত তাঁকে কালচার মিনিস্টার পদ গ্রহণ করবার প্রস্তাব দিলেও তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। আরাফাত যখন প্যালেস্টাইনের জনগণকে "অকৃতজ্ঞ" বলে উল্লেখ করেন, তার উত্তরে দারবিশ বলেছিলেন — "তাহলে আপনি অন্য কোনো দেশের জনগণকে পছন্দ করুন।" পরের বছর, ১৯৮৮তে প্যালেস্টাইনের জনগণের স্বাধীনতার মেনিফেস্টো লেখেন দারবিশ। ১৯৯৩ সালে "অসলো চুক্তি"-কে "ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ" আখ্যা দিয়ে দারবিশ পিএলও এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যপদ ত্যাগ করেন। তিনি সবসময়ই ইসরাইলের সঙ্গে আপোসের ক্ষেত্রে "দৃঢ় এবং নিরপেক্ষ" ভূমিকা নেবার পক্ষপাতি ছিলেন।


১৯৭০ সালে পিএলওর চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ও অঙ্গসংগঠন পিএফএলপির সেক্রেটারি জেনারেল জর্জ হাবাশের সাথে মাহমুদ দারবিশ। উল্লেখ্য জর্জ হাবাশ (২/৮/১৯২৬ – ২৬/১/২০০৮) প্যালেস্টাইনের খ্রীস্টান বংশোদ্ভূত রাজনীতিক ছিলেন।
—————————————————————–

বন্ধু ইয়াসির আরাফাত তাঁকে কালচার মিনিস্টার পদ গ্রহণ করবার প্রস্তাব দিলেও তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। আরাফাত যখন প্যালেস্টাইনের জনগণকে "অকৃতজ্ঞ" বলে উল্লেখ করেন, তার উত্তরে দারবিশ বলেছিলেন — "তাহলে আপনি অন্য কোনো দেশের জনগণকে পছন্দ করুন।"

—————————————————————–
১৯৬৯ সালে ইউনিয়ন অব আফ্রো-এশিয়ান রাইটার্সের দ্য লোটাস প্রাইজ লাভ করেন দারবিশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিন পিস প্রাইজ পান ১৯৮৩ সালে, ফ্রান্স থেকে দ্য নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটারস প্রাইজ পান ১৯৯৩ সালে, ২০০১ সালে কালচারাল ফ্রিডম-এর জন্য পান দ্য লানান ফাউন্ডেশন প্রাইজ, ২০০৪ সালে তাঁকে দেয়া হয় প্রিন্স ক্লস অ্যাওয়ার্ডস, ২০০৭ সালে পান বসনিয়ান স্টিকাক পুরস্কার, একইসালে গোল্ডেন রেথ অব স্ট্রগা পোয়েট্রি ইভনিংস সম্মাননা লাখ করেন তিনি। ফ্রেঞ্চ টিভির পক্ষ থেকে মাহমুদ দারবিশ নামে তাঁকে নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেন ফরাসি-ইসরাইলি ডিরেক্টর সাইমন বিটন।

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে আসাফির বিলা আজনিহা (উইংলেস বার্ডস, ১৯৬০), আওরাক আল-জাইতুন (লিভস অব অলিভস, ১৯৬৪), আশিক মিন ফিলাস্তিন (আ লাভার ফ্রম প্যালেস্টাইন, ১৯৬৬), আখির আল-লাইল (দ্য এন্ড অব দ্য নাইট, ১৯৬৭), ইয়াওমিয়াত জুর্‌হ ফিলাস্তিনি (ডায়েরি অব আ প্যালেস্টাইনিয়ান উন্ড, ১৯৬৯), হাবিবাতি তানহাদ মিন নাওমিহা (মাই বিলাভেড অ্যাওয়াকেনস, ১৯৬৯), আল-কাতাবাহ 'আলা ধাওয়ি আল-বনদুকিয়াহ (রাইটিং ইন দ্য লাইট অব গান, ১৯৭০), আল-আসাফির তামুত ফি আল-জালিল (বার্ডস আর ডায়িং ইন গালিলি, ১৯৭০), মাহমুদ দারবিশ সমগ্র (দুই খণ্ডে, ১৯৭১) ইত্যাদি। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ কা-জাহর এল-লজ অ আব'আদ (সেইম অ্যাজ আলমন্ড ফ্লাওয়ার্স অর ফার্দার)। গদ্যের বইয়ের মধ্যে আছে সামথিং অ্যাবাউট দ্য হোমল্যান্ড (১৯৭১), মেমোরিজ অব ফরগেটফুলনেস (১৯৮৭), বাইপাসারস ইন বাইপাসিং ওয়ার্ডস (১৯৯১) এবং ২০০৬ সালে প্রকাশিত ইন দ্য প্রেজেন্স অব অ্যাবসেন্স ইত্যাদি।

৯ আগস্ট ২০০৮ তারিখে আমেরিকার মেমোরিয়াল হেরম্যান হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে প্যালেস্টাইনে সমাহিত হবার বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন মাহমুদ দারবিশ। সেটি সম্পন্ন হয়েছে। তবে ব্রেইন ডেথের ক্ষেত্রে অযথা কোশেশ করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা না করার কথাও বলে গেছেন তিনি। চিকিৎসকরা সেটা করেছেন কিনা জানা যায়নি। মৃত্যুর জন্য হয়তোবা প্রস্তুতই ছিলেন সততবিহারী দারবিশ।

ঢাকা, ১৪/৮/২০০৮