দুই বছরের প্রাপ্তি ও তিন বছরের প্রত্যাশা

মোস্তাফা জব্বার
Published : 11 Jan 2011, 02:30 PM
Updated : 11 Jan 2011, 02:30 PM

শেখ হাসিনার সরকার গত ৫ জানুয়ারি ২০১১ দুটি বছর পার করেছে এবং ৬ জানুয়ারি ২০১১ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত তাদের সামনে এই মেয়াদ পুরো করার জন্য আরও তিনটি বছর সময় রয়েছে। কোন অঘটন না ঘটলে এই সময়কে ধরেই আমরা বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় সরকারের কার্যক্রম বিবেচনা করবো। খুব সঙ্গত কারণেই বিগত দুই বছরে এই সরকার কতোটা পথ এগিয়ে গেলো তার হিসাব নিকাশ করার পাশাপাশি আগামী তিন বছরে এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কী থাকতে পারে সেটি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। কাকতালীয়ভাবে এটি আরও সত্য যে, এই সময়ে ২০১০ নামক আরও একটি ইংরেজি বছর বিদায় হয়েছে এবং ২০১১ নামের আরও একটি নতুন বছরে আমরা পা রেখেছি। যদিও এই বছর শুরু বা শেষটার সাথে বাস্তবে নতুন কিছু ঘটার বা নতুন কিছু বদলে যাবার তেমন কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নেই, তথাপি বছর ঘুরে নতুন একটা পঞ্জী এলেই সকলের মাঝেই সাধারণত এক ধরনের প্রত্যাশা জন্ম নেয়। কার্যত পহেলা জানুয়ারি অথবা মেয়াদের তৃতীয় বছরের প্রথম দিনটি অন্য একটা দিনের চাইতে আলাদা হবার কোন কারণ নেই। তবুও ঘড়ির কাঁটাটা সেই দিনের প্রথম প্রহরে পৌঁছার সাথে সাথেই একটি নতুন অনুভূতি প্রায় সকলকেই নাড়া দেয়। হতে পারে, স্বপ্ন দেখার একটা সুযোগ আমরা কাজে লাগাই। আমাদের সেইসব স্বপ্নের সব যে সত্য হয় তাতো নয়–তবুও স্বপ্ন দেখতে অসুবিধা কোথায়! আমরা লক্ষ্য করলাম, এই সময়ে নানা ধরনের মন্তব্য বা মতামত প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন মিডিয়া একেবারে জনমত যাচাইও করেছে।

আমরা যারা তথ্যপ্রযুক্তির মানুষ তাদের জন্যও এর ব্যতিক্রম নেই। অতীতে অনেক বার এমন সময়ে আমরা নানা প্রত্যাশার প্রদীপ জ্বালিয়ে অপেক্ষা করেছি নতুন দিনে নতুন প্রাপ্তির জন্য। কিন্তু সব সময়ে সকল কিছু আমাদের ভাগে পড়েনি। বরং অনেক অনেক অধ্যায় জুড়ে হতাশা ও অপ্রাপ্তির হিসাব মিলাতে গিয়ে কোনটাই মিলাতে পারিনি আমরা। স্মরণ করতে পারি, নানা সময়ের কথা। নানা শাসনকালের কথা। কতো চাওয়া আর পাওয়ার মাঝেই না আমরা সাঁতার কেটেছি। কতো স্বপ্ন, কতো পরিকল্পনা এবং কতো প্রস্তাবনা নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি–কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারিনি কোনটাই।

এবার যখন শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসে তখন সেই প্রত্যাশা নতুন করে জন্ম নেয়। বলা যায়, এক ধরনের আশায় বুক বেঁধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই আমরা। বলা যায়, আগের প্রত্যাশা যেটি '৯৭ থেকে ২০০১ সালে শেখ হাসিনার কাছে আমাদের ছিলো, সেটি আরও বেড়ে যায়। হাসিনার প্রথম সরকারের পরের এবং দ্বিতীয় সরকারের আগের সময়টার অপ্রাপ্তি এবং পেছনে চলার ধারাটি পুরোপুরি বদলে যাবে এবং নতুন আরও অনেক কিছু ঘটবে তেমন আশায় বুক বেঁধেই আমরা ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সময়কালে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে পেয়েছিলাম। এর সবচেয়ে বড় ভিত্তি ছিলো যে, নির্বাচনের আগেই তিনি অন্য আরও অনেক বিষয়ের সাথে বারো বছরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহারে থাকলেই কেউ সেটি বাস্তবায়ন করে বা করার চেষ্টা করে এমনটি আমরা ধারণা করি না। অতীতে এমন অনেক প্রতিশ্রুতি আমরা বিভিন্ন সময়ে পেয়েছি, নির্বাচনে জিতে গিয়ে সরকার গঠন করার পর যেগুলো ভুলে যাওয়া হয়েছে। তবে এই সরকার বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে তাদের সচেতনতা দেখিয়ে আসছে প্রথম দিন থেকেই। আমি যদি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে এই সরকারের কী সব কাজ ছিলো সেটিও স্মরণ করি, তবে সেই সময়কাল সম্পর্কেও আমাকে ইতিবাচক কথাই বলতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার দুই বছর পর আমার প্রথম মূল্যায়ন হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণাটিই এই সরকারের প্রথম বড় সাফল্য। সারা দুনিয়ার প্রায় সকলেই যখন ইলেকট্রনিক কালচারে ব্যস্ত এবং দুনিয়াতে একটি ইলেকট্রনিক বিপ্লব বা সভ্যতার কথা বলছেন তখন একেবারে পেছনের কাতার থেকে হতদরিদ্র বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল সভ্যতা গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করতে সক্ষম হলো। একটি সাধারণ গণভিত্তির রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে একটি দরিদ্র দেশের একজন সাধারণ মানুষের প্রিয় নেত্রীর পক্ষ থেকে এমন একটি ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানুষের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসাটাই শেখ হাসিনার অনেক বড় একটি সাফল্য। আমি নিজে মনে করি বাঙালি জাতি তার বিগত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্লোগানকে সামনে রেখে যেভাবে পথ চলেছে তাতে ছয় দফা, এগারো দফার পর সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ আমরা পাই "জয় বাংলা" শ্লোগানে। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ গড়ে উঠেছে সেই একটি শ্লোগানের ওপর ভিত্তি করে। স্বাধীনতার আগে সশস্ত্র লড়াই করার প্রেরণা পেয়েছি আমরা এই শ্লোগানে। সশস্ত্র যুদ্ধের সময় আমরা পুরো জাতির পরিচয় পেতাম এই শ্লোগানে। এরপর বিভিন্ন জন বিভিন্ন শ্লোগান নিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা করেছেন। নতুন বাংলাদেশ, প্রথম বাংলাদেশ, সম্ভাবনার বাংলাদেশ ইত্যাদি নানা নামে আমাদের ভবিষ্যৎকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেইসব শ্লোগান এখন কালের ইতিহাসে হারিয়ে গেছে। শুধু মাত্র "ডিজিটাল বাংলাদেশ" শ্লোগানটি এখন আমাদের নিজেদের দেশে এবং সারা দুনিয়াতে বাংলাদেশের পরিচিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান যথার্থভাবেই বলেন যে, "ডিজিটাল বাংলাদেশ" শ্লোগান প্রদান করা থেকেই এই সরকারের সফলতার কাব্য রচিত হতে শুরু করেছে।

আমি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করতে চাই নির্বাচনের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি গ্রহণ করার জন্য। একই সাথে সেই ধারণাটি বাস্তবায়নের জন্য তার নিজের, সরকারের ও দলের প্রচেষ্টাকে আমি স্বাগত জানাই। গত দুই বছরে তিনি নিজে অসাধারণ মমতা ও আগ্রহ নিয়ে এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশকে কেবল একটি শ্লোগান হিসেবেই দেখছি না। আমাদের উচিত হবে তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, সেই সফলতার কথা প্রথমে বলে এরপর তাঁর গত দুই বছরের সফলতার কথা বা ব্যর্থতার বিষয় তুলে ধরা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকারের দুই বছরকে মূল্যায়ন করার সময় আরও দুটি বিষয় স্মৃতিতে রাখা দরকার। প্রথমত অন্তত ২০০১ থেকে ২০০৮ সময়কালের দুটি সরকার একই বিষয়ে কী ধরনের কাজ করেছে সেটি মনে রাখতে হবে। অন্যদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ দুই বা পাঁচ বছরে গড়ে তোলার কথা বলা হয়নি। এটি একটি বারো বছরের কার্যক্রম এবং এই সরকার সেই সময়কালের মাত্র এক ষষ্ঠমাংশ সময় অতিক্রম করেছে।

ক্ষমতাসীন সরকার সেই প্রত্যাশার কতোটা পূরণ করেছে এবং কতোটা করতে পারেনি তার হিসাব নিকাশ আসলে হবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে। সেদিন পুরো জাতি রায় দেবে এই পাঁচ বছরের সাফল্য ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে। এখন আমরা সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই। যেসব বড় ইস্যুতে আমাদের সংকট দানা বেঁধেছিলো–যেমন বিদ্যুৎ–এই দুই বছরে তার চূড়ান্ত সমাধান না হলেও অন্তত কিছু একটা ঘটার মতো অবস্থা অবশ্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি। ঢাকার যানজট যেভাবে দিন-রাতকে স্থবির করে দিয়েছে তার সমাধান হয়নি, তবে সেটির বিপরীতে কিছু না কিছু প্রচেষ্টার নমুনা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমি মনে করি, ২০১৩ সালের শেষ প্রান্তে গিয়ে আমরা এসব বিষয়ের মূল্যায়ন করতে পারবো। তাছাড়া সকল বিষয় নিয়ে এমন ছোট নিবন্ধে আলোচনা করাও সহজ নয়। আমাদের জীবনের চাকাটি বেশ বড়–সরকারের কাজের পরিধিটাও অনেক বড়। তাই আমরা অতি সংক্ষেপে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সরকারের কোন কোন প্রধান প্রধান মাইলফলক তৈরি হলো বা কী কী মাইল ফলক তৈরি হতে হবে সেইসব বিষয়ে আলোকপাত করতে পারি।

ডিজিটাল ব্যাংকিং: প্রথমত বিগত দুই বছরে বড় কয়েকটি পরিবর্তনের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। এই সময়ে একটি ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আমরা ই-কমার্সের দুনিয়াতে পা রেখেছি। খুব শিঘ্রই এম-কমার্সের জগতে পা রাখবো। আগামী তিন মাসে এই খাত আরও প্রসারিত হবে এবং বছর শেষে এটি বাংলাদেশের অন্য সকল খাতের শীর্ষে অবস্থান নেবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনমান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কলকারখানায় একটি ডিজিটাল যুগ কেবল দৃঢ় হবে না, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ভিত যথেষ্ট শক্ত হয়ে উঠবে।

দুই বছরে আমি এই সরকারের যে সফলতাটিকে গুরুত্ব দিতে চাই সেটি হলো নীতি ও কৌশল বিষয়ে সরকারের একটি সুষ্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সরকার একশো দিনের মাঝেই একটি আইসিটি নীতিমালা গ্রহণ করেছে এবং অন্তত দুই বছরের মাঝেই একটি কৌশলগত বিষয় নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।

তৃতীয়ত সরকার তার নিজের শরীরে ছোটখাটো একটি ঢেউ তুলতে পেরেছে এবং সরকারের তৃণমূল, মাঠ পর্যায়ের বা সচিবালয়ের আমলাদের কাছে এই বিষয়টি স্পষ্ট করতে পেরেছে যে, একটি ডিজিটাল রূপান্তর অনিবার্য এবং সেই পরিবর্তনকে না ঠেকিয়ে একে সহায়তা করাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

নীতি ও অবকাঠামো: চতুর্থত সরকার অন্তত এটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, তার দায়িত্বের সীমানাটা অবকাঠামো তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তার সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না এবং সরকারের উপলব্ধি হয়েছে যে, বেসরকারি খাত বা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার অবকাঠামোগত বিষয়গুলোর একটি সঠিক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

বরাবর যে বিষযটি আমি করে থাকি সেটি এবার আমি করতে চাই না। কারও কোন কাজের মূল্যায়ন করার সময় আমি এটি দেখার চেষ্টা করি যে, কাজ করার সময় আমরা কী কী সুযোগ হাতছাড়া করেছি। হতে পারে, বিগত দুই বছরে সরকার আরও অনেক কিছু করতে পারতো। হতে পারে, সরকারের সফলতা আরও ব্যাপ্ত হতে পারতো। কিন্তু আমি এবারের সময়সীমাটিকে এক যুগ বিবেচনা করে দুই বছরের সময়টিকে কেবলমাত্র ওয়ার্মআপ সময় হিসেবে ধরে নিয়ে ২০১১ থেকে ২০১৩ সময়কালে খুব গুরুত্বপূর্ণ দু চারটি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

ডিজিটাল সরকার: বরাবরের মতো আমি এবারও বলতে চাই যে, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির এবারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সরকারের নিজের চরিত্র বদলানোর। সরকার তার কাগজের সচিবালয়কে একটি ডিজিটাল সচিবালয়ে, কাগজের প্রশাসনকে একটি ডিজিটাল প্রশাসনে এবং তার কাগজের বস্তাকে ডিজিটাল স্টোরেজ ব্যবস্থায় রূপান্তর করতে পারলে এটি হবে আগামী তিন বছরের সবচেয়ে বড় সফলতা। শুধুমাত্র কয়েকটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করে সরকার তার ডিজিটাল কর্মসূচির কোন সফলতা আনতে পারবে না। বরং সরকারকে তার কাজ করার পদ্ধতি বদলাতে হবে। বাস্তবতা হলো এখন পর্যন্ত আমরা কেবলমাত্র ওয়েবসাইট দেখেছি–ডিজিটাল প্রশাসন দেখিনি। একটি জেলা প্রশাসনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করলে সেটি মানুষের প্রচলিত কাজ করার পদ্ধতিকে কিছুটা সহজ করতে পারে বটে–কিন্তু প্রশাসন ডিজিটাল না করে যদি এমন কিছু করা হয় তবে সেটি অফিসে একজন রিসেপশনিস্ট বসানোর মতো কাজ হবে। যদিও সরকারের কর্মচারীরা ই-মেইল বুঝতে শুরু করেছেন এবং মেইল চালাচালিতে অভ্যস্ত হয়েছেন তথাপি ফাইলে নোট লেখার বদলে ডিজিটাল কমিউনিকেশন করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বড় সফলতার কথা আমি স্মরণ করতে পারি। সরকার এরই মাঝে তার কাগজের বাস্কেটটি ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম ও দুনিয়ার সবচেয়ে আধুনিক একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করেছে। এটি ডিজিটাল সরকার গঠনের একটি বড় ধরনের অভাবকে পূরণ করেছে। একই সাথে বাংলা গভঃ নেট ডিজিটাল সরকারের অবকাঠামো নির্মাণে বড় রকমের সহায়তা করবে।

ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা: সরকারের আরও দুটি কাজ হতে পারে দুটি বড় ক্ষেত্রে। একটি ক্ষেত্র ভূমিব্যবস্থাকে ডিজিটাল করে। অতীতে অনেক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেও সেইসব কার্যক্রমকে সফল করা সম্ভব হয়নি। এখনও তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ আমরা নিতে দেখিনি। ২০১১ সালের দ্বিতীয় দিনে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের সভায় তিন বছরের মাঝে ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে সরকারের তিন বছরের প্রধানতম সাফল্য হবে সেটি যদি তাকে বাস্তবে রূপায়িত করা যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ সাধারণ মানুষের জন্য–এমন কথা কেবল তখনই বাস্তবায়িত করা যাবে যদি গ্রামের কৃষক তার ২০ শতাংশ ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা পায়।

ডিজিটাল শিক্ষা: তৃতীয়ত সরকারের অগ্রাধিকারটি হতে হবে শিক্ষা বিষয়ক। একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে সরকার নীতি ও আইনগত বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট ভালো কাজ করেছে। তবে আমি ভুলে যাইনি যে, যারা এই শিক্ষানীতির মূল কাঠামো তৈরি করেছেন তারা নিজেরাই শিক্ষায় প্রযুক্তির প্রয়োগ বিষয়ে সন্দিহান। আমি এর চেয়ারম্যান কবীর চৌধুরীর একটি লেখা একটি অনলাইন সংবাদসংস্থার ওয়েবসাইটে পড়ে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে, আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় এই মানুষেরা সাহস করলেও খুব বেশি দূর যাবার মতো স্বপ্ন দেখতে সক্ষম নন। এজন্য এখনও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ১৭৬০ সালে শুরু হওয়া শিল্প বিপ্লবের উপযোগী, ২০১০ সালের উপযোগী নয়। ২০২১ সালের জন্যও এই শিক্ষানীতির ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। এর অন্তরে ও বাহিরে পরিবর্তন ছাড়া এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে পারবে না। কী বিষয়বস্তু কী শিক্ষাদান পদ্ধতি–কোনটাই এখনও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী আধুনিক নয়। এই শিক্ষানীতি হয়তো আগের চাইতে ভালো, কিন্তু সেটি কোনভাবেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নয়। তবে শিক্ষানীতির দশা যাই হোক না কেন শিক্ষা দেবার পদ্ধতিতে যদি বিদ্যমান অবস্থা বহাল রাখা হয় তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের গায়ের চামড়া তৈরি হবে অন্তরটা তৈরি হবে না। এমনকি একটি ডিজিটাল বাংলাদেশের কাঠামো তৈরি হলেও বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা থেকে জন্ম নেয়া জ্ঞানকর্মীরা সেটি রক্ষা করার যোগ্যতা রাখবেন না। কেবলমাত্র ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক তৈরি করতে পারে। আমি মনে করি এই ক্ষেত্রে আগামী তিন বছর সরকারের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হবে। আমরা যতো দ্রুত আমাদের সমাজটাকে কৃষিযুগ থেকে একটি ডিজিটাল যুগে নিতে চাই তার জন্য শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাদানের উপায়টা বদলানো দরকার।

আমি চিরকালই আশাবাদী মানুষ। সেজন্যই আমি মনে করি আগামী তিন বছরেই সরকার এসব বিষয়ে সার্বিক পরিবর্তন আনতে পারবে। আমি তৃতীয় বছরে পদার্পন সময়কালে এই সরকারের সফলতা কামনা করি।

মোস্তাফা জব্বার : লেখক, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট। বিজয় কীবোর্ড ও  কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার প্রণেতা।