তেপান্তরের আকাশতলে

shihab_sarker
Published : 17 Jan 2008, 05:18 PM
Updated : 17 Jan 2008, 05:18 PM

মহাশূন্যে ঝুলে থাকে এক মহা জপমালা
ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে বাঁধা,
ঝুলে আছে অন্তরীক্ষে আদি অন্তহীন,
শতকোটি তার মুক্তোদানা।

নেই-ভুবনের অবাক সৈকতে ভেসে আসা
ঝিনুকের পবিত্র, সাদা আলোকচ্ছটা।

মহাবিস্ফোরণ হয়ে গেলে
যে-পৃথিবী গ্রহে নেমেছিলো
কোটি বছরের বৃষ্টি, দল মেলেছিলো প্রাণ
তারপর আরো লক্ষ কোটি বছরের শেষে
মানুষের রক্তে ভিজেছিলো
মানুষের হাত, আবার বিবাদ থেমে গেলে
নরনারী খুঁজেছে অপার জ্যোতি
পতিত পাবন আর ঘাতকের মুখে,
গহিন বন থেকে গহিনতর বনে,

তখনো মানুষ সব একেকটি মুক্তো
মহাশূন্যে ঝুলে থাকা মালার মুক্তোদানা।

কালাম, ডেভিড, শালোম,
অনুরাধা, গৌতম আর অযুত লক্ষ নামে
শতকোটি ফুল, ফুলকলি। লাল নীল
সাদা হলুদ কালো। আরো অপার্থিব কত রঙ
মানুষ আজো দেখে নাই।

প্রাণের ভিতরে প্রাণ, মুক্তোর ভিতরে মুক্তো
মানুষের বয়সী মহা জপমালা
মানুষের বয়সী দেবদূতেরা
মানুষের বয়সী রক্তপায়ী পিশাচেরা
মানুষের বয়সী গুপ্ত দানবেরা।

জপমালার ওপর অন্ধ দানবের লাল চোখ
গরম নিঃশ্বাসে ঝড় বয়,
একটি, দু'টি মুক্তো খসে পড়ে।
ধ'সে গেছে মাটির বাড়ি, সৌধ, উপাসনাগার
শান্ত পাহাড়পল্লীতে মৃত্যুর তাণ্ডব

কী আশ্চর্য, দ্যাখো!
মালা ছত্রখান হয়ে গেলে
করুণার সূতা ফের কী নিপুণ গেঁথে যায়
নতুন কালামের প্রাণে নতুন ডেভিডের প্রাণ,
শালোমের প্রাণে অনুরাধা

মহাশূন্যে ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে
ফের ঝুলে থাকে মহাপৃথিবীর মালা
যুগ যায়, শতাব্দী যায়, সহস্র বছর যায়

মাটির গ্রহে কী অসহায় তুমি আর আমি
সুরভির সঙ্গে ঘোরে গন্ধক,
শীতল বৃশ্চিক ঢুকে যায় ফুলশয্যার ভিতর
কালো দস্তানার থাবা ঝুলে থাকে স্থির
প্রাণে প্রাণে গাঁথা ফুলের ওপর,

মুক্তোর ভিতর দৈত্যের কুণ্ডলী

আবারো ছিঁড়বে মহা জপমালা?
পড়ুক না ধসে যত জীবন-ছলকানো টাওয়ার,
মৃত্যুবীজ ছড়াতে ছড়াতে যাক মিসাইল, গুচ্ছবোমা,
আর গানশিপ নিবিড় মরূদ্যানে
আসুক লক্ষ্যভেদী মারণ-জীবাণু

কালাম, ডেভিড, শালোম, অনুরাধা…
কোথায় তোমরা সকলে,
এখনি এসো তেপান্তরের আকাশতলে
আদিঅন্তহীন দৈব জলসায়।
এ মালা আমরা আর ছিঁড়তে দেবো না।