জেমস রেনেল ও তাঁহার রোজনামচা : ১৭৬৪-১৭৬৭ (চতুর্থ কিস্তি)

সলিমুল্লাহ খান
Published : 21 Jan 2008, 05:31 PM
Updated : 21 Jan 2008, 05:31 PM

কিস্তি

(চতুর্থ কিস্তি)


জেমস রেনেল (১৭৪২-১৮৩০)

আমিন জেমস রেনেল

বিরচিত

শুকনা মৌসুমে গঙ্গানদী হইতে কলিকাতা যাইবার নিকটতম পথ খুঁজিয়া পাইবার লক্ষ্যে জলঙ্গি নদীর মাথা হইতে ব্রহ্মপুত্র বা মেঘনা নদীর সঙ্গমস্থল পর্যন্ত গঙ্গার; লক্ষীপুর হইতে ঢাকা পর্যন্ত মেঘনা ও অন্যান্য নদীর; এবং দক্ষিণ তীরবর্তী নদীনালার জরিপকার্যের বিবরণী সংযুক্ত

রোজনামচা

সন ১৭৬৪-১৭৬৭

তর্জমা: সলিমুল্লাহ খান

(গত সংখ্যার পর)

৩রা হইতে ৮ই জুলাই পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ই বৃষ্টি হইল, পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব দিক হইতে ঝড়ো হাওয়া বহিল। বাহিরে যাইবার পথ বন্ধ হওয়ায় আমি নদীনালার মানচিত্র নকল করিতে আর গভর্নর সমীপে পাঠাইতে শুরু করিলাম আর ৭ তারিখ রাত্রি নাগাদ কাজ শেষ করিলাম [compleated them] আর পরদিন সকালবেলা যে দুইজন হরকরা দুইটি পত্র লইয়া আসিয়াছিল তাহাদিগের হাতে মানচিত্রগুলি পাঠাইলাম।

৫ তারিখে, পাটনামুখি একখানি ৪০০০ মণি নৌকা পাশ দিয়া চলিয়া গেল। ইহা মাত্র ৪ ৩/৪ হাত পানি কাটিল।

৮ তারিখে জরিপে হাত দিলাম। আজ ঘন ঘন কয়েক পশলা বৃষ্টি হইল। আমার আন্দাজ হয় ৬ হাত মতো পানি বাড়িয়াছে। আজ অপরাহ্ণে একটা উঁচা মন্দির (Pagoda) দেখিলাম, ইহা দক্ষিণ পূর্ব দিকে ২ কি ৩ মাইল দূরে হইবে। ইহা মথুরাপুর (Motrapur) গ্রামের অদূরে।

৯ তারিখ সকাল বেলা দক্ষিণ পশ্চিম দিক হইতে ঝড়ো হাওয়া ছিল। পূর্বাহ্নে একই দিক হইতে তাজা হাওয়া বহিতেছিল; অপরাহ্ণে বিরতিহীন বৃষ্টি। আজ অনুমান করি ৭ হাত পানি বাড়িয়াছে। নদীগুলি বড় আকাবাঁকা, দেশগ্রাম খোলামেলা আর চক্ষু জুড়ায়।

১০ তারিখ ঝড়ঝঞ্ঝাময় আর বৃষ্টি হইল। মথুরাপুরের মন্দির পার হইলাম। মন্দিরটি খালের পুবপাড়ে। এই মন্দিরের দুই মাইল ভাঁটিতে একটি বড় খাল বাঁদিকে মোড় লইল। এই খালটি এখন এই ঋতুতে বড় বড় নৌকা চলাচলের উপযোগী কিন্তু শুকনা মৌসুমে কোন কোন স্থান একদম শুকাইয়া যায়। ইহা জয়নগর ও হাজিগঞ্জ হইয়া বহিয়া যাইতেছে।

এই পর্যন্ত আসিয়া খালটির নাম বদল হইয়াছে। এই পর্যন্ত ইহার নাম ছিল চানুনা (Chununah) আর এক্ষনে ইহা কুমার (Comer বা Comare) নাম গ্রহণ করিল। এইখান হইতে ইহা পশ্চিম দক্ষিণ পশ্চিমমুখি হইয়া ৫ মাইল বহিতেছে। এইস্থলে ইহা আগের তুলনায় অনেক বেশি সংকীর্ণ খাতে বহিলেও বেশ উল্লেখ করিবার মতন গভীরতা পাইয়াছে।

১১ তারিখ ঝোড়ো সকাল। দিনের বাকি অংশ আবহাওয়া সুন্দর গেল। আমরা বন্দরস বা গোপালপুর নামক এক গ্রামের পাশ দিয়া চলিলাম। গ্রামটি কুমার নদের পূর্ব শাখা বা হবিগঞ্জমুখি খালের ভাঁটিতে বড় এক মাইল মতো দূরে হইবে। এখানে অনেক সুপারি গাছ।

১২ তারিখ পূর্বাহ্ন পরিষ্কার। দুপুরে এক ঝাপটা হাওয়া, অপরাহ্ণ খুব চমৎকার। আজ সন্ধ্যায় এমন এক জায়গায় আসিয়া পৌঁছিলাম যেখানে নদী দুই ভাগে ভাগ হইয়া গিয়াছে। বড় শাখাটির নাম দাঁড়াইয়াছে বড়শি আর ইহা ঘুরিয়া গিয়াছে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বদিকে। শুনিলাম ইহাতে সারা বছর নৌকাসাম্পান চলে আর ইহা জয়নগর আর খুলনার কাছাকাছি যায়। ছোট শাখাটি উত্তর পশ্চিমমুখি হইয়া পশ্চিমে বহিতেছে। যদিও ইহা সাধারণভাবে বলিতে মাত্র ৭০ গজ চওড়া তবুও ইহা গভীর আছে। খালটির নাম কুমার। প্রথম দৃষ্টি মনে হইতেছে কলিকাতা যাইবার নিকটতম পথ ইহার বক্ষেই রহিয়াছে, তাই আমি স্থির করিলাম প্রথমে ইহা জরিপ করিয়া লই। যদি দেখা যায় ইহা নৌকাসাম্পান চলিবার উপযোগী নহে, তখন বড়শির পথ ধরিয়া আগান যাইবে।

১৩ তারিখ সারাদিন মেঘলা আর ঠাণ্ডা। কুমার খাল জরীপ করিয়া চলিলাম আর দেখিলাম পানি ১৪ হইতে ২১ হাত গভীর। যদি ধরিয়া লই ৭ হাত মতো পানি বাড়িয়াছে তবে শুকনা মৌসুমে পানির গভীরতা ৭ হাতের কম হইবে না।

বড়শি নদীর মাথা হইতে আড়াই মাইল উপরে কুষ্টিয়া (Custee) খালের (গড়াই নদী) সবচেয়ে পূর্বদিকের মাথাটি কুমার নদীতে পড়িয়াছে। এই মৌসুমে ইহার পানি বেশ কালো দেখা যাইতেছে। গ্রামবাসীরা ইহাকে লতিদমন খাল বলে। লতিদমন গ্রাম ইহার পূর্বপাড়ে আছে, ঠিক ঐ জায়গাতেই ইহা কুমারের সহিত মিলিয়াছে। এইখান হইতে কয়েক মাইল পর্যন্ত কুমার পশ্চিমমুখি হইয়া দক্ষিণে চলিয়াছে।

১৪ তারিখ সকালবেলাটা ঠাণ্ডা; দিনের মধ্যভাগে প্রচণ্ড গরম। লতিদমন হইতে ৩ মাইল পশ্চিমে খালটি উত্তর-পশ্চিমে ঘুরিয়া আরো ৩ মাইল ঐ মুখে ছুটিয়া আর সেইখানে গিয়া দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘুরিয়া প্রায় সমান দূরত্ব অতিক্রম করিয়াছে। আমরা দেখিলাম পানির গভীরতা কোথাও ৩৪ হাত কোথাও ৮ হাত (শুকনা মৌসুমে)। দুই পাড়ে জঙ্গল ঘন। তাই জরিপকাজে আমাদের বেশ ব্যাঘাত সহ্য করিতে হইল।

১৫ তারিখ পূর্বাহ্ন। আবার অতিরিক্ত তাপ দেখা দিল, অথচ আবহাওয়া শান্ত। অপরাহ্ন ও সন্ধ্যা ঠাণ্ডা ও সুখকর। আমরা এখনও কুমার খাল ধরিয়া চলিতেছি। এখানে দেখিলাম অনেক অনেক কচ্ছপ, কোন কোনটি বিশাল বড়। গ্রামবাসীরা বলিতেছেন, এই পথ দিয়া আমাদের আগে আর কোন ফিরিঙ্গি লোক (European) আসিতে তাহারা দেখেন নাই।

১৬ তারিখ সকাল সন্ধ্যা চমৎকার আবহাওয়া। দিনের মধ্যভাগে তাপমাত্রা বাড়িয়াছে অতিরিক্ত। কুমার খাল ধরিয়া চলিতে চলিতে আজ আমরা আরেকটি খালে আসিয়া পড়িলাম। এই খালটি কুমারের চাহিতেও বড়। ইহা বহিয়া আসিয়াছে উত্তর-পশ্চিম দিক হইতে। গ্রামবাসীরা বলিতেছেন ইহা কুষ্টিয়া খালের পশ্চিম শাখাগুলির মধ্যে সবচেয়ে উপরেরটি, কিন্তু উহারা বলিতে পারিলেন না ইহার বক্ষে কতদূর পর্যন্ত নৌকাসাম্পান চলে। আর ইহার ও কুষ্টিয়া খালের মধ্যবর্তী জায়গায় ইহা হইতে বাহির হইয়াছে এমন দক্ষিণ-পশ্চিমগামি অন্য কোন খাল আছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর-ও উহারা দিতে পারিলেন না। এই খালটির নামও কুমার (Comer বা Comare) বটে। এক্ষণে এই নামের দুই খাল এক স্রোতে মিশিয়া প্রবল আকার ধারণ করিয়াছে আর মিলিত স্রোত দ্রুতবেগে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব মুখে ছুটিয়া বারাসাত নামক নতুন নামধারী নদীতে পরিণত হইয়াছে।

এইখানে যে সকল মাঝির সহিত আমাদের পরিচয় ঘটিয়াছে তাহাদের কেহ কেহ বলিয়াছেন বারাসাত নদী বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত চলিয়াছে। গ্রামটি জঙ্গলভূমি বা সুন্দরবনের পূর্বপ্রান্তে। তাহারা আরও বলিয়াছেন কয়েক ক্রোশ (Coss) নামিলে দেখা যাইবে ইহার পূর্ব পাশ হইতে আর একটি খাল নামিয়া বড়শি নদী পর্যন্ত গিয়াছে। আরো জানিলাম তিন বা চারি দিন পর্যন্ত চলিলে ভাঁটিতে আরও একটি খাল পাওয়া যাইবে যাহা পশ্চিমতীর দিয়া বাহির হইয়া রাঙ্গাফুলা (Rangafulla) কিংবা কলিকাতার সন্নিকট দক্ষিণা হ্রদ (Southern Lakes) পর্যন্ত পৌঁছিয়াছে। এই খবর যদি সাচ্চা হইয়া থাকে তবে আমরা যে পথের খোঁজে পথে থামিয়াছি তাহা খুঁজিয়া পাইবার আশা এখনও জীবন্ত রহিয়াছে। খালের গতিপথ হিসাব করিয়া দেখিলে আমাদের আশা করিবার পক্ষে সত্য সত্যই যুক্তিসংগত কারণ আছে। আমার কিছুটা সন্দেহ হইতেছে এই খালেরই একটা শাখা বেতোয়ালেরায় (Betwallerah) গিয়া হুগলি নদীতে পড়িয়াছে।

১৭ তারিখ সকালবেলা বৃষ্টিভেজা, দিনের মধ্যভাগে দক্ষিণপূর্ব দিক হইতে আনকোরা দমকা হাওয়া। সন্ধ্যাবেলা চমৎকার।

আজ বারাসাতের ২ ১/২ মাইল জরিপ করিলাম। ইহা প্রায় দক্ষিণপূর্বগামী। পানির গভীরতা ১৩ হইতে ৪১ হাত পর্যন্ত।

১৮ তারিখ সকালবেলা যে সহকারীটিকে আমি কুমার খালের উত্তর-পশ্চিম খাত (অর্থাৎ কুষ্টিয়া খালের অতিপশ্চিমাংশ) দেখিবার জন্য পাঠাইয়াছিলাম তিনি ফিরিয়া আসিয়াছেন আর জানাইতেছেন এই নদীর ৭ কি ৮ মাইল পর্যন্ত নৌ চলাচলের উপযোগী অবস্থায় আছে। গ্রামবাসীরা তাহাকে জানাইয়াছেন আরো কয়েক ক্রোশ উপরে গেলে একটি খাল পাওয়া যাইবে যাহা এই খাল হইতে বাহির হইয়া দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চলিয়াছে। ইহা জানিয়া আমি বারাসাত জরিপে ক্ষান্ত দিলাম আর কুমারের উত্তর-পশ্চিম শাখা ধরিয়া আগাইতে লাগিলাম। আশা এই যে উপরে যে খালের কথা পাড়িয়াছি তাহা হইতে রাঙ্গাফুলা অথবা দক্ষিণা হ্রদ পর্যন্ত যাইবার পথ পাইলেও পাওয়া যাইতে পারে।

যে জায়গায় আসিয়া আমরা বারাসাতের জরিপকাজ গুটাইয়া লইয়াছিলাম তাহার নাম মধ্যপুর (Maddepur)। ইহা নদীর পশ্চিমপাড়ে বটে।

আজ সন্ধ্যায় কুমার খালের উজানে উত্তর-পশ্চিমে এক মাইল পর্যন্ত গেলাম। নদীর গতিপথ উত্তর-পশ্চিমমুখি উত্তরে। গভীরতা ১০ হইতে ২০ হাত। খাল এই স্থলে ১৫০ হাত চওড়া।

১৯ তারিখ। দিনটি তাতানো। পূর্বাহ্নে কয়েক পশলা হালকা বৃষ্টি হইল। খাল ধরিয়া আরো ৫ মাইল উজানে গেলাম। গতিপথ উত্তর-পশ্চিমমুখি-পশ্চিম হইতে পশ্চিমমুখি-দক্ষিণে। বারাসাতের মাথা হইতে ৫ মাইল উজানে উত্তরদিক হইতে একটি ছোটখাল আসিয়া এই নদীতে পড়িয়াছে। তবে শুকনা মৌসুমে ইহা নৌ চলাচলোপযোগী নহে। ঝিল (Jeels) হইতে আসিয়াছে বিধায় ইহার পানি বেশ কালো। এই তল্লাটের দেশগ্রাম এক্ষণে বন্যার পানিতে প্রায় সবটা ডুবিয়া গিয়াছে। ডোবে নাই শুদ্ধ নদীর তীরতুর, আর ডোবে নাই যে সকল ছোট ছোট মাটির ¯তূপের ওপর গ্রামগুলি গড়িয়া উঠিয়াছে সেইগুলি।

এই খালের মুখ হইতে এক মাইল মতো উজানে আর অভয়পুর (Awaypur) গ্রামের উল্টাদিকে আমরা মাপিয়া ১০ ১/২ হাত পানি পাইলাম। বর্ষায় ৮ হাত মতো বাড়িয়াছে ধরিয়া লইলে দেখা যায় ইহাতে শুকনা মৌসুমে শুদ্ধ ২ ১/২ হাত পানি থাকিতেছে। অভয়পুরবাসীরা বলিলেন কোন কোন মৌসুমে এই জায়গায় ২ হাত পানিও থাকে না, ফলে ৩০০ মণ বোঝাই নৌকাও এই পথে চলিতে পারিবে না। আরো উজানে খালের গভীরতা শুকনা মৌসুমে ৪, ৫ কিংবা ১০ হাতও হয়। আরো নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করিবার আশায় আমিও উজানে আগাইলাম।

অভয়পুরের দেড় মাইল উজানে একটা ছোট খাল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক বরাবর বাহির হইয়াছে। কিন্তু শুকনা মৌসুমে ২ মাইল পর্যন্ত ইহা নৌ চলাচলোপযোগী নহে। গ্রামবাসীরা অবশ্য আমার সহকারীকে বলিয়াছেন ইহা অনেক দূর পর্যন্ত নৌ চলাচলোপযোগী।

২০ তারিখ সকালটা শান্ত, বিকালবেলা ভারি গুমোট আবহাওয়া। আজ পূর্বদিকে কুষ্টিয়া হইতে আগত এক মাঝির সহিত আলাপ হইল। ভদ্রলোককে বেশ বুদ্ধিমান বলিয়াই মনে হইল। উনি বলিলেন অভয়পুরের অদূরে যে খাল তাহা দিয়া শুকনা মৌসুমে ২০০ মণের নৌকা চলিবে না। একই কায়দায় উনি বলিলেন এই খালটাই কুষ্টিয়া খালের সর্বপশ্চিম শাখা। আরও বলিলেন অভয়পুরের ৫ মাইল পশ্চিমে বকসিপুরের একটি খাল পশ্চিম দিক হইতে আসিয়া এই খালে পড়িয়াছে। আমার ধারণা জলঙ্গি নদীর পূর্ব পাড়ে বকসিপুর নামে যে গ্রাম আছে এই বকসিপুরই সেই গ্রাম। উনি অবশ্য বলিতেছেন ইহা অভয়পুর হইতে শুদ্ধ ১৮ মাইল দূরে।

এক্ষণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মনে হইতেছে জলঙ্গি নদীর পূর্বদিকে গঙ্গা হইতে যতগুলি নৌ চলাচলের উপযোগী শাখা বাহির হইয়াছে তাহাদের সর্বপশ্চিমটি এই বারাসাত নদী। আর তাই মনে হইতেছে কলিকাতা যাইবার নিকটতম পথ ইহার মধ্যেই পাওয়া যাইবে। কিন্তু এখন আমার হাতে লোকজনকে দেওয়ার মতন নগদ টাকা একেবারেই নাই, আর সুন্দরবন জরিপ করিবার মতন উপযুক্ত কোন নৌকাও নাই। তদুপরি এখন বর্ষা মৌসুমের একেবারে মধ্যভাগে, ফলে পানির গভীরতা সম্বন্ধে আমাদের ভুল করিবার সম্ভাবনাই বেশি, কারণ এক্ষণে নদীতে হঠাৎ পানি বাড়িতেছে আবার হঠাৎ কমিতেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত করিয়াছি এক্ষণে অধিক আগাইবার আগে প্রথমে ঢাকা যাইয়া কিছু নগদ টাকা ও নৌকা যোগাড় করাই সমুচিত হইবে।

আমরা এখন লতিদমন খালের (বা কুষ্টিয়া খালের সর্বপূর্ব শাখার) আশপাশে আছি। তাই ভাবিলাম এই খালটার যতটুকু নৌকা চলাচলের যোগ্য এতটুকু পর্যন্ত হালকা জরিপ করিয়া লইলে মন্দ হয় না। জলঙ্গি নদী ও কুষ্টিয়া খালের নৌকাসাম্পান জয়নগর ও হবিগঞ্জে যাওয়া আসার সাধারণ পথ হিসাবে এই খালকেই ব্যবহার করে, বিশেষ করিয়া যখন নদীতে পানি আসার পর নৌকা চলাচলের সুবিধা হয় তখন। প্রতি বছর মে মাসের শেষাশেষি এই ঘটনা ঘটিয়া থাকে।
(চলবে)

১৭ জানুয়ারি ২০০৮