বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা কি আলু-পটলের বাণিজ্য নাকি!

মাসুদুজ্জামান
Published : 11 July 2010, 03:00 PM
Updated : 11 July 2010, 03:00 PM

এই গ্রহে অর্থাৎ বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের শুধু বিস্মিত নয়, বিমূঢ় করে দেয়। সম্প্রতি এরকম একটা খবরের প্রতি আমাদের চোখ আটকে গেল। একসময় তিনি ছিলেন তুখোর বামপন্থী ছাত্রনেতা, স্বাধীনতাপূর্বের প্রতিটি শিক্ষা-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তারপর উঠে এসেছেন সংসদীয় রাজনীতিতে; তারই নেতৃত্বে এমন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল চূড়ান্ত হয়েছে যা সংসদে অনুমোদিত হলে আমাদের শিক্ষার একটা অংশের ভবিষ্যৎ শুধু অন্ধকার নয়, তমসাচ্ছন্ন হতে বাধ্য। বিলটির মর্মকথা হলো, মালিক পক্ষের স্বার্থরক্ষা করা। কী ভয়ঙ্কর কথা! মালিক পক্ষের স্বার্থে প্রণীত হয়েছে কোনো সাধারণ বিল নয়, একটি শিক্ষাবিল। শিক্ষা সংক্রান্ত বিল, কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করবে না, করবে মালিকদের স্বার্থ! এই ব্যাপারটিই আমাকে বিমূঢ় করে দিয়েছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, যার নেতৃত্বে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার সম্পর্কিত বিলটি চূড়ান্ত করেছে, তিনি হচ্ছেন বাম ঘরাণার প্রখ্যাত সাংসদ রাশেদ খান মেনন। একসময় যার মুখে মালিক পক্ষের স্বার্থের পরিবর্তে জনমানুষের স্বার্থের কথা খৈয়ের মতো ফুটতো।

সংস্কার একটি অনিবার্য বিষয় এবং এটি একধরনের চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু কোন সংস্কারটি কার স্বার্থে করা হবে? কেন করা হবে–সে-সবই হচ্ছে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ-প্রসঙ্গে মনে পড়ছে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটা চমকপ্রদ মন্তব্য করেছিলেন হিস্পানি দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী হোসে অর্তেগা গাসেত, আলবেয়ার কামু যাকে মনে করতেন নীৎসের পরে জন্ম নেয়া ইউরোপের মহান লেখক। গাসেতই বলেছিলেন, এরা (সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়) হচ্ছে সেই ধরনের "যন্ত্র যারা ব্যবহৃত বা নিগৃহীত" হয় নানাভাবে। কতটা তারা সফল হবে সেই বিশ্বাস সুদৃঢ় না থাকলেও সংস্কারের আগ্রহ থাকে তাদের প্রবল। অর্তেগাই মনে করিয়ে দিয়েছেন, হেগেল বলেছিলেন কোনো কিছু বদলে দিতে হলে তীব্র আবেগ বা ইচ্ছা থাকতে হয়, কিন্তু সেই আবেগ হতে হবে নিয়ন্ত্রিত, লক্ষ্যাভিমুখি, 'শীতল'। 'বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য' (মূল ভাষায় প্রকাশকাল: ১৯৪৪) শীর্ষক একটা বইতে অর্তেগা তুলেছিলেন এই সংস্কার প্রসঙ্গ। বাংলাদেশেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার ঘটেছে, উপনিবেশবাদী কাল থেকে উত্তর-উপনিবেশবাদী সমাজে রূপান্তরের মুহূর্তে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। স্বাধীনতা অর্জনের পর সেই সংস্কার ছিল অনিবার্য। তবে সেই সংস্কার কতটা সুফল বয়ে এনেছে, অনেক আগেই এই প্রশ্ন উঠেছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের সঙ্গে যুক্ত, তারাই এর যুগোপযোগিতা নিয়ে এখন সন্দিহান। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক সমস্যা। এই সমস্যার উদ্ভব যেমন ছিল অনিবার্য তেমনি এর সংস্কারও হয়ে উঠেছে আবশ্যিক।

সময়টা এমনই।  আমরা এখন পুরোপুরি বাজারপুঁজি ও সংস্কৃতির কুক্ষিগত হয়ে পড়েছি। এই সংস্কৃতি, যা হয়, সৃষ্টি করছে সেই পণ্য,  শিক্ষাপণ্য। এই শিক্ষা বিক্রি করছে সার্টিফিকেট আর আমরা পাচ্ছি মেধাহীন তথাকথিত এক শিক্ষিত এলিট ক্লাশকে; সেই সঙ্গে পাচ্ছি মেধাহীন সংস্কৃতি, সমাজ, সর্বোপরি এমন এক প্রজন্ম যারা বাংলাদেশকে কোনোভাবেই নেতৃত্ব দিতে পারবে না, পারা সম্ভবও নয়। রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান আসলে ভয় পায় এমন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে, যেখান থেকে সৃষ্টি হবে এমন এক শ্রেণীর নাগরিক, যারা সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মুক্ত স্বাধীন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। অথচ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিচর্চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, যার নেতৃত্বে আছেন এমন এক ব্যক্তিত্ব–রাশেদ খান মেনন–যিনি পাকিস্তান আমলে গণবিরোধী প্রতিটি শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বলে মনে করা হয়, তার হাত দিয়ে বেরিয়ে এলো করপোরেট স্বার্থরক্ষাকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধিবিধান।

আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ অন্তহীন। তবে মূল অভিযোগ হলো, যে-কোন উপায়ে হোক তারা অর্থ উপার্জন ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। এটা নিঃসন্দেহে করপোরেট পুঁজির একটা বর্ধিত সংস্করণ। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য হতে পারে, কিন্তু শিক্ষা কী আলু-পোটলের ব্যবসা নাকি? সার ও পেস্টিসাইড দিয়ে কৃষক উৎপাদন করলো আর বাজারজাত করার কল্যাণে ভোক্তার পেটে চালান হয়ে গেল? সমকালীন বৈশ্বিক বা দেশীয় অর্থনীতি, আমরা জানি, উৎপাদন আর ভোগনির্ভর। সারা পৃথিবী জুড়েই এই ভোগবাদী অর্থনীতির এখন রমরমা অবস্থা। কিন্তু শিক্ষাকে এরকম ভোগবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশেই, এমনকি করপোরেট-শিরোমণি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শিক্ষাকে এভাবে দেখা হয় না। শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই শিক্ষাকে দেখা হয়, মালিকদের স্বার্থে নয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সে-দেশে বাণিজ্য করে, তবে তাদের মূল লক্ষ্য থাকে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। বিষয়বস্তুনির্ভর জ্ঞানের পাশাপাশি স্বাধীন চিন্তার বিকাশ, নেতৃত্ব দানের গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা, আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিত্ব নিয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করা, স্বাধীন স্বশিক্ষার দিকে চালিত করা। কিন্তু আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী করছে? শিক্ষার্থীদের কোন গুণটি অর্জনে সাহায্য করছে?

শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, যার নেতৃত্বে আছেন এমন এক ব্যক্তিত্ব–রাশেদ খান মেনন–যিনি পাকিস্তান আমলে গণবিরোধী প্রতিটি শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বলে মনে করা হয়, তার হাত দিয়ে বেরিয়ে এলো করপোরেট স্বার্থরক্ষাকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধিবিধান।

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হলে যে খোলামেলা আবহ আর অবকাঠামো দরকার, যা নিশ্চিত হতে পারে সুন্দর একটা ক্যাম্পাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে, তার কিছুই তো অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এই মৌলিক অবকাঠামোর অনুপস্থিতি দিয়ে শুরু হয়েছে এক-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম। তবে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব বা শিক্ষক নিয়োগ দানের অনীহা। এই অনীহা কেন? দেশে কী বিষয়ভিত্তিক উপযুক্ত মেধাবী শিক্ষকের অভাব রয়েছে? মোটেই তা নয়। আমাদের আর যা-ই হোক মানবসম্পদের অভাব নেই। এই অনীহার মূল কারণ হলো কম পয়সা বিনিয়োগ করে বেশি উপার্জনের বাসনা। ন্যূনতম যে অবকাঠামো দরকার, গবেষণাগার থেকে শুরু করে ভালো একটা লাইব্রেরি, তার কোনো কিছুই দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে অধিকাংশেরই নেই। শিক্ষাবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, যে-কোনো শিক্ষাকর্মসূচির বড় একটা দিক হচ্ছে কী পড়ানো হচ্ছে, পঠনপাঠনের সেই পাঠ্যক্রম (সিলেবাস) ও শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম)। দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম (বিষয়বস্তু) লক্ষ করলেই দেখা যাবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় মানের দিক থেকে তা যেমন নিচু, তেমনি পরিমাণগত দিক থেকে অনেকটাই কম। ফলে শিক্ষার্থীরা যা শিখছে তা যেমন পর্যাপ্ত নয়, তেমনি মানসম্পন্নও নয়। কোনো কিছু ব্যাপক ও গভীরভাবে জানা বা শেখার যে চাপ থাকে, তা থেকে তারা মুক্ত হয়ে হেসেখেলে পরীক্ষায় পাস করে যায়, আর বাগিয়ে নেয় এক-একটা সার্টিফিকেট। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা এভাবেই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এই শিক্ষার্থীরাই যখন শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, তখনই বাধে বিপত্তি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় তারা কতটা ভালো করছে, কোন ক্ষেত্রে করছে, সেটা একটা গবেষণার বিষয়। পৃথকভাবে যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের 'ক্যারিয়ার প্যাথ' নিয়ে গবেষণা হয়, তাহলে তার একটা ছবি পাওয়া যেত। কিন্তু বাংলাদেশে তো এই ধরনের গবেষণা হয় না, কী সরকারি পর্যায়ে, কী বেসরকারি স্তরে। তবে সাধারণভাবে যেটা দেখা যায় তা হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিযোগিতায় তারা হেরে যায়। এর মূল কারণ বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লক্ষ্য হচ্ছে একটাই, যে-কোনো উপায়ে হোক সনদ বিক্রি করে শিক্ষার্থীদের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করা।  শিক্ষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি যে আইনি সংস্কার করেছে, তাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের পকেট কাটার অভাবনীয় বৈধতা দিল। তবে এই বিলের একটা ভালো দিক আছে; নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শিক্ষা না থাকলে শুধু টাকার জোরে মালিকপক্ষের কোনো সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পদ,  যেমন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধক্ষ্যের পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। তবে এই বিলের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো, অ্যাকাডেমিক দিকটি প্রায় উপেক্ষিত থেকে গেছে। শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা এটাই।

কীভাবে শিক্ষার্থীদের শ্রমবাজারের উপযুক্ত পণ্য করে তোলার পরিবর্তে মানবিক গুণসম্পন্ন সুনাগরিক করে তোলা যায়, সেই লক্ষ্য কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। তবে শিক্ষার্থীরা যাতে আলু-পটলের মতো করপোরেটপণ্য না হয়ে ওঠে, সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বিলে এ ধরনের কোনো দিকনির্দেশনা নাই। বিলটি পুরোপুরি প্রণীত হয়েছে আর্থিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে। খ্যাতিমান ফরাসি দার্শনিক জাক দেরিদা একবার বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত একটা প্রবন্ধে ('দি ফিউচার অফ দ্য প্রফেশন অর দ্য য়ুনিভার্সিটি উইদাউট কন্ডিশন') লিখেছিলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করে সত্য, আর এটাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বা পেশা। এটি সত্যের প্রতি অনিঃশেষ অঙ্গীকার ঘোষণা করে অথবা এই সত্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে।" (দ্রষ্টব্য: জাক দেরিদা অ্যান্ড দ্য হিউম্যানিটিজ: আ ক্রিটিক্যাল রীডার, পৃ. ২৪)। সমকালের আরেক বিশ্বখ্যাত ভাবুক এডোয়ার্ড সাঈদ সেই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনদায়িত্ব সম্পর্কে, বিশেষ করে রাজনীতি ও ক্ষমতায়ন সম্পর্কে শিক্ষাবিদরা সচেতন থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন ('অন ডেফিঅ্যান্স অ্যান্ড টেকিং পজিশনস্', রিফ্লেকশনস্ অন এক্সাইল অ্যান্ড আদার এসেজ, পৃ. ৫০৪)।

তিনি মনে করতেন গণতন্ত্রের এই যুগে শিক্ষার্থীরা দেশকাল-রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হবে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে তাদের সহায়তা করা। কিন্তু এই বিষয়টির সামান্যতম প্রতিফলনও ঘটেনি প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবিলে। আমাদের এই প্রত্যাশা হয়তো অহেতুক, বাংলাদেশে আমরা কী চাই আর কী ঘটে–এ দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান সবসময়ই থেকে যায় আকাশপাতাল। অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাকার্যক্রমকে একটা শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করছিল, তাদের লক্ষ্য ছিল একদিকে আর্থিক অনিয়ম দূর করা; অন্যদিকে অ্যাকাডেমিক বিষয়আশয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনায় এনে সমস্ত পরিবেশকে শিক্ষাবান্ধব করে তোলা। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিধিবিধানের কারণে তারা তা করে উঠতে পারেনি। এখন নতুনভাবে সংস্কার করে যে বিলটি সংসদে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে, তাতে কী আর্থিক, কী প্রশাসনিক, কী শিক্ষার বিষয়বস্তু বা শিক্ষাদান কোনো কিছু সম্পর্কে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর মঞ্জুরী কমিশনের কোনো কর্তৃত্বই থাকবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠবে সনদ বেচাকেনার বৈধ প্রতিষ্ঠান, করপোরেট পুঁজিবাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংস্করণ। আলু-পটলের ব্যবসার মতো আরেক ধরনের ভোগ্যপণ্যনির্ভর বাণিজ্যমাত্র।

কিন্তু এত হতাশার মধ্যেও আশার বাণী শুনিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, আইনটি হয়তো মালিক পক্ষের দিকে গেছে, আইনটির মূলচেতনা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, কিন্তু এটাই শেষকথা নয়; এটি সংশোধনের সুযোগ থাকছে। বলা বাহুল্য, রাশেদ খান মেননের সমসাময়িক আমাদের শিক্ষামন্ত্রীও পাকিস্তানি আমলে প্রতিটি শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন, গণবিরোধী শিক্ষানীতি বা বিধিবিধানের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছেন লড়াকু ভূমিকা। আমরা আশা করবো, তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য আবার সংসদীয় কমিটির কাছে ফেরত পাঠাবেন বা প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে সংসদে উপস্থাপন করবেন যাতে এটি মালিকবান্ধব না হয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব হয়।